লঙ্ঘন: বিধি উড়িয়ে করুণাময়ীর মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে একাধিক গাছে জড়ানো হয়েছে আলো। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
গাছের গায়ে কোনও ভাবেই বাঁধা যাবে না বিদ্যুতের তার। ঝোলানো যাবে না আলো। সম্প্রতি এমনই এক নির্দেশিকা জারি করেছে বিধাননগর পুরসভা। কিন্তু বিধাননগর মেলাকে কেন্দ্র করে সেই নির্দেশিকাই লঙ্ঘিত হতে দেখা যাচ্ছে। মেলার সৌন্দর্যায়নের জন্য সল্টলেকের করুণাময়ীতে বইমেলা প্রাঙ্গণের বাইরে বিভিন্ন গাছে বড় বড় রঙিন হ্যালোজেন-সহ নানা ধরনের আলো জ্বালানো হচ্ছে। গাছের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের তার।
বইমেলা প্রাঙ্গণে বুধবার শুরু হয়েছে বিধাননগর মেলা। চলবে আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত। প্রতি বছরই বিভিন্ন মেলাকে কেন্দ্র করে বইমেলা প্রাঙ্গণের বাইরের গাছ আলো দিয়ে সাজানো হয়। তা ছাড়া, বাড়ির নীচে রেস্তরাঁ, স্পা, কফি শপ-সহ নানা ধরনের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ঘিরেও গাছের গায়ে আলো জ্বালানো দস্তুরে পরিণত হচ্ছিল। সেই কারণেই ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুরসভা। কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখা গেল না বিধাননগর মেলার ক্ষেত্রেও।
বিধাননগর পুরসভার পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ রহিমা বিবি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের তার ওই ভাবে গাছে জড়ালে গাছের ক্ষতি হয়। তাই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। খবর নিয়ে দেখছি, কারা গাছে আলো লাগিয়েছেন। বাইরের কেউ হলে অবশ্যই আলো খুলে দেওয়া হবে। মেলা কয়েক দিনের, তাই হয়তো গাছে আলো লাগানো হয়েছে।’’
বিধাননগর মেলা যে জায়গায় হয়, তার গায়েই সেন্ট্রাল পার্ক। সেখানে বহু পাখির বসবাস। তা ছাড়া, মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে যে সব গাছে আলো লাগানো হয়েছে, সেগুলিতেও পাখি, কাক বসতে দেখা যায়। পক্ষীপ্রেমী সুদীপ ঘোষের কথায়, ‘‘সব সময়ে যে গাছে পাখি থাকবেই, তেমনটা না-ও হতে পারে। কিন্তু ওই ভাবে একাধিক গাছে আলোকিত পরিবেশ থাকলে পাখিরা দিন এবং রাতের তফাত করতে পারে না। পাশেই তো সেন্ট্রাল পার্ক পাখিদের বড় আস্তানা। মেলার আলো, কোলাহল, জলসা— সব মিলিয়েই পাখিদের সমস্যা হতে পারে।’’
পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ জানান, সারা বছর ধরেই শহরে নানা উৎসব ঘিরে আলো লাগানো হয়। আর তার জড়ানোর জন্য গাছেদের ব্যবহার করা হয়। তাঁদের মতে, এক জন মানুষকে সারা রাত আলো জ্বালিয়ে জাগিয়ে রাখলে যেমন কষ্ট হয়, একটি পাখিরও তেমনই কষ্ট হয়।
বিধাননগরে গাছে আলো না লাগানোর প্রস্তাব সেখানকার পরিবেশ বিভাগের তরফেই দেওয়া হয়েছিল। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে পুরপ্রতিনিধিরা তা মেনে নেন। গাছে আলো না লাগানোর পুর সিদ্ধান্তের কথা বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচার করা হচ্ছে বলে পুরপ্রতিনিধিরা জানান। সেই নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানার কথাও ভাবা হয়েছে। কিন্তু পুরসভার সেই নির্দেশ যখন পুরসভা আয়োজিত মেলা ঘিরেই লঙ্ঘিত হল, তখন কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে প্রশ্নও উঠছে।