দুর্গাপুজোতেই সেঞ্চুরি, আর কালীপুজোয়?

চলতি বছরে নিয়ম ভেঙে বাজি ফাটালে শাস্তির উপরে গুরুত্ব দিয়েছে পর্ষদ। রবিবার একটি বৈঠকে পর্ষদের তরফে এই শাস্তির কথা স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

আড়ালে: লুকিয়ে চকলেট বোমার কেনাবেচা। সোমবার, গড়িয়ায়। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

শব্দতাণ্ডব নিয়ে দুর্গাপুজোতেই অভিযোগের সংখ্যা একশো পেরিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে এখন নজর কালীপুজো ও দীপাবলির দিকে। পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, এ বছর অভিযোগের সংখ্যা যদি দুর্গাপুজোতেই অতীত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে থাকে, তবে কালীপুজোয় শব্দদানবের দাপট মারাত্মক আকার নিতে পারে।

Advertisement

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, দুর্গাপুজোয় সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে শব্দতাণ্ডবের ১৪০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। পর্ষদের সদস্য-সচিব রাজেশ কুমারের দাবি, তাঁরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিয়েছেন। যদিও পর্ষদ কর্তাদেরই একাংশ মনে করছেন, তাতেও কালীপুজোয় শব্দতাণ্ডবের আশঙ্কা কমছে না। কারণ শব্দদূষণের ক্ষেত্রে দুর্গাপুজো ‘ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ’ও নয়! কালীপুজো ও দীপাবলির তিন-চার দিনে কন্ট্রোল রুমে যে সংখ্যক অভিযোগ দায়ের হয়, তার সংখ্যা দুর্গাপুজোর তুলনায় অনেক গুণ বেশি। ফলে দুর্গাপুজোয় শব্দতাণ্ডব রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ হলেও আসল পরীক্ষা সেই কালীপুজো-দীপাবলিই। পর্ষদের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘কম পক্ষে ২০ গুণ বেশি অভিযোগ দায়ের হয়। শুধু কলকাতা থেকেই অভিযোগের সংখ্যা অনেক বেশি হয় এই সময়ে।’’

যদিও চলতি বছরে নিয়ম ভেঙে বাজি ফাটালে শাস্তির উপরে গুরুত্ব দিয়েছে পর্ষদ। রবিবার একটি বৈঠকে পর্ষদের তরফে এই শাস্তির কথা স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে। ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৮৬’-এর ১৫ নম্বর ধারায় সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছরের জেলের কথা বলা হয়েছে। এমনকি, পরিবেশগত ক্ষতির ক্ষেত্রে যে অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়, শব্দবাজি ফাটিয়ে দূষণ ছড়ালেও তেমনই ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথাও বলা হচ্ছে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘মানুষের শুভবুদ্ধির উপরে শুধু ভরসা করে থাকলে যে হবে না, তা পর্ষদ বুঝেছে। কড়া শাস্তি না হলে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল।’’

Advertisement

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘সমস্ত কিছুতেই আজকাল শব্দবাজি বা ডিজে-র অভ্যাস চলে এসেছে। সকলেই জানাতে চান যে, তাঁরা কিছু একটা করছেন। তার জন্য পরিবেশের ক্ষতি হলেও বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই।’’ বিক্ষিপ্ত ভাবে বাজি ফাটানোকে আবার গুরুত্ব দিতে নারাজ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চ। সংগঠনের একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, যেখানে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক মদতে সংগঠিত ভাবে বাজি ফাটানো হয়, সেই সব এলাকাতেই শব্দবাজি বা ডিজে-র দাপট সব চেয়ে বেশি। সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘শব্দদূষণ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে প্রতি বছরই আমরা কন্ট্রোল রুম খুলি। সেখানে জমা পড়া অভিযোগগুলির ভিত্তিতে বলতে পারি, প্রভাবশালীদের মদত রয়েছে এমন এলাকায় শব্দবাজির দাপটও বেশি। কোনও এলাকায় দু’একজন অল্পবয়সি দু’একটা বাজি ফাটালে খুব একটা ফারাক পড়ে না!’’

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে আনছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের মতে, যে সমস্ত পুজো উদ্বোধন করেন কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা, ঘটনাচক্রে যে সমস্ত এলাকাতেই শব্দবাজি বা নিয়ম ভেঙে জলসার প্রবণতা বেশি হয়। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘ভাবটা এমন যে, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা উদ্বোধন করেছেন, অতএব আমরা ইচ্ছেমতো বাজি ফাটাতে বা ডিজে বাজাতে পারি। কেউ কিছু বলবে না। এই মানসিকতার জন্যেও শব্দদূষণ হয়। পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement