প্রতীকী ছবি
সচেতনতা নয়, জরিমানা ছাড়া শব্দ দূষণের উপদ্রব থামানো যাবে না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব হয়েছিলেন পরিবেশকর্মীদের একটি অংশ। সম্প্রতি শব্দদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়েও জরিমানার বিষয়টির উপরেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে, শব্দতাণ্ডব ঠেকাতে প্রশাসন প্রয়োজন মতো জরিমানার পরিমাণও বাড়াতে পারে। সেই জরিমানার টাকা সচেতনতার প্রচারে খরচ করা হবে।
কারণ শুধু সচেতনতার প্রচারে কতটা শব্দতাণ্ডব ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সরকারের তরফে ধারাবাহিক ভাবে সচেতনতার প্রচার করা হয়। তাতে যদি কাজই হত, তবে এত দিন ধরে শহরবাসীকে শব্দের তাণ্ডব সহ্য করতে হত না। তাই জরিমানার দাওয়াই অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। শব্দদূষণ সংক্রান্ত মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘রাজ্য পরিবেশ দফতর বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দ্রুত জরিমানা সংক্রান্ত নির্দেশিকা বার করা উচিত। জরিমানার পরিমাণ এমন হওয়া উচিত, যাতে সকলে ভয় পান। নয়তো কোনও লাভ হবে না।’’
শব্দদূষণ নিয়ে আদালত ২০০৪ সাল থেকে নির্দেশ দিয়ে আসছে এবং সতর্ক করে আসছে। তাতেও যে কাজ হয়নি, সাম্প্রতিক কালীপুজো ও দীপাবলিই তার প্রমাণ। যেখানে অবাধে শব্দবাজি ফেটেছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রথম বার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসারদের এফআইআর করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী পর্ষদের তরফে এফআইআর-ও দায়ের করা হয়। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
পরিবেশ আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে শব্দদূষণ নিয়ে অতীতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে। যেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত শব্দদূষণের বিষয়টি স্কুল সিলেবাসে যুক্ত করার কথা বলেছিল। যাতে নবীন প্রজন্ম শব্দ দূষণ সম্পর্কে সচেতন হয়। সেই রায়ে পুলিশ ও প্রশাসনিক স্তরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। এমনকি যানবাহন সম্পর্কেও রায়ে বলা হয়েছে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় যেন হর্ন না বাজে।
কিন্তু রাতের শহরে যে প্রতিনিয়ত সে নিয়ম লঙ্ঘন হয়, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘যদি শব্দ দূষণ সংক্রান্ত নির্দেশের ক্রমতালিকা দেখি তা হলে দেখা যাবে, ২০১৭ সালের জুলাই, অগস্ট, অক্টোবর ও নভেম্বরে ধারাবাহিক ভাবে নানা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার কতটা কী মানা হয়েছে, তা বাস্তব পরিস্থিতি থেকেই পরিষ্কার!’’