এটিএমের সামনে লাইন। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
নবান্নে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে জনা কুড়ির ভিড়টা উসখুস করছিল সকাল থেকেই। টাকার গাড়ি কখন আসে, তার অপেক্ষায় ঘোরাঘুরি করছিলেন কিছু পুলিশ ও সরকারি কর্মী। লাইন থেকেই এক পুলিশকর্মী ভবনের মূল গেটে কর্তব্যরত সহকর্মীকে ফোন করে বললেন— ‘‘টাকার গাড়ি ঢুকলেই বলবি। ১১ তলায় বলতে হবে।’’ কিন্তু কোথায় গাড়ি? বিকেল পর্যন্ত হা পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকাই সার।
টাকা না এলে কী হবে, দেড়টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির উদ্দেশে নবান্ন ছাড়তেই এটিএমের সামনে উপচে পড়ে ভিড়। কে নেই সেই লাইনে— বিভিন্ন দফতরের সাধারণ কর্মী থেকে বড়বাবু, মায় পুলিশ অফিসারেরাও পকেটে একাধিক কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এই মাগ্গিগণ্ডার বাজারে এক এক জনের কাছে একাধিক কার্ড কেন? এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘আমাদের কিছু কর্মী এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ডিউটি করেন যে, সেখান থেকে নড়তে পারেন না। তাই আমরা ওঁদের কার্ডে টাকা তুলে দেব।’’
বেলা পৌনে ৪টে নাগাদ এটিমের সামনে ভিড় যখন দেড়শোয় ঠেকেছে, টাকার গাড়ি হাজির হল নবান্নের মূল গেটে। গেট পেরোতেই মোবাইলে জানাজানি হয়ে যায়, টাকা এসেছে। দুদ্দাড় করে লোকজন উপর থেকে নেমে আসেন। তখন আর তর সইছে না। মেশিনে টাকা ভরার সময়টুকু দিতেও নারাজ গ্রাহকেরা। চেঁচামেচি-হট্টগোলে ভরে গেল নবান্ন।
বিকেল ৩টে নাগাদ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক কর্মী। সওয়া ৫টা নাগাদ ২০০০ টাকা হাতে বেরিয়ে বললেন, ‘‘বড় লাইন। সময় লাগবেই। বাড়িতে টাকা নেই, বাজারহাট করতে হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে এটুকু কষ্ট মানতেই হবে।’’
এক দিকে বাস ধরার তাড়া, অন্য দিকে পকেট ফাঁকা। দোলাচলে ভুগছিলেন নবান্নের সরকারি কর্মীরা। সন্ধের মুখে ৬০-৭০ জনের লাইন। কেউ কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে বাস ধরতে যাওয়া সহকর্মীর উদ্দেশে বলছিলেন, ‘‘সিট রাখ, যাচ্ছি।’’ কিন্তু টাকা না নিয়ে লাইন ছাড়বেন কী করে? অগত্যা মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। এর মধ্যেই সন্ধে পৌনে ৬টা নাগাদ ফের এল টাকার গাড়ি, এ বার অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে। এবং ফের সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি। কিছু লোক পুরনো লাইন ছেড়ে সটান নতুন লাইনে।
এক জন বলে ওঠেন, ‘‘সরকারের সদর দফতর। এখানে টাকা মিলবে না, হতে পারে?’’
কার্যত, গত তিন দিনের খরা কাটিয়ে এ দিনই দু’বার টাকা ঢুকল নবান্নের এটিএমে। শনি-রবি-সোম পরপর ছুটি পড়ে যাওয়ায় টাকার জোগানও কমে গিয়েছিল। ওই ক’দিন মাত্র এক বার টাকার গাড়ি ঢুকেছিল নবান্নে, পরিমাণেও ছিল অল্প। এ দিন অবশ্য সেই খেদ মিটেছে।