প্রতীকী ছবি।
ই এম বাইপাসের চিংড়িঘাটায় গাড়ির ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত গাড়ির মালিককে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। চিরতোষ রায় নামে ওই ব্যক্তিকে শনিবার গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা। ওই দিন বিকেলে যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেই সময়ে ই এম বাইপাসের সিগন্যাল সবুজ ছিল। পাঁচ নম্বর সেক্টরের দিকের সিগন্যাল ছিল লাল। আচমকাই গাড়িটি তীব্র গতিতে এসে পরপর পথচারীদের ধাক্কা মারতে থাকে।
রবিবার পুলিশ চিরতোষবাবুকে বিধাননগর এসিজেএম আদালতে হাজির করে। প্রায় এক ঘণ্টা সরকারি আইনজীবী ও অভিযুক্তের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন বিচারক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়। ধৃতের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিনযোগ্য ধারা দেওয়ায় অভিযুক্তের আইনজীবী রজতশুভ্র দাস ও অনির্বাণ দত্ত তাঁদের মক্কেলের জামিনের আর্জি জানান।
বিচারক জানান, একটি দুর্ঘটনায় ছ’-সাত জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এক জনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তদন্তকারী অফিসার যা ইচ্ছে ধারা দিতে পারেন। সবটাই খতিয়ে দেখা হবে। ‘‘তদন্তকারী অফিসারের ধারার উপরে নির্ভর করে রায় দিলে তো জামিন-অযোগ্য কোনও ধারায় কেউই কোনও দিন জামিন পাবেন না’’— মন্তব্য করেন বিচারক।
এর পরে শুরু হয় সওয়াল-জবাব। সরকারি আইনজীবী সাবির আলি জানান, পুলিশ ৩০৪ (এ) ধারায় মামলা রুজু করেছে। যার অর্থ, দুর্ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত ও কারও মৃত্যু হতে পারে বলে চালকের ধারণা ছিল না। তিনি আদালতকে জানান, কেউ যখন গাড়ি চালান, তখন তাঁর ধারণার মধ্যেই থাকে যে গাড়ির ধাক্কায় কারও মৃত্যু হতে পারে। কেন পুলিশ সেই ধারায় মামলা রুজু করল না, সেই প্রশ্নও তোলেন সরকারি আইনজীবী। দুর্ঘটনার পিছনে গাড়ির বেপরোয়া গতিকেই দায়ী করেন তিনি।
জবাবে চিরতোষবাবুর দুই আইনজীবী দাবি করেন, কাউকে ধাক্কা মারার অভিপ্রায় তাঁদের মক্কেলের ছিল না। তিনি দুর্ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। অভিযুক্তের আইনজীবীরা জানান, তাঁদের মক্কেল উচ্চ রক্তচাপ এবং সুগারের রোগী। চিরতোষবাবু কত দিন আগে লাইসেন্স পেয়েছেন, তা-ও তাঁকে ডেকে জানতে চান বিচারক। প্রায় এক ঘণ্টা সওয়াল-জবাব শেষে অভিযুক্তকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
পরে অভিযুক্তের আইনজীবী রজতবাবু দাবি করেন, দুর্ঘটনার মুহূর্তে তাঁর মক্কেল মাথা ঠিক রাখতে পারেননি। দুর্ঘটনার পরে স্থানীয়দের দাবি ছিল, চিরতোষবাবু ভুলবশত ব্রেকের বদলে অ্যাক্সিলারেটরে পা দিয়েছিলেন। সেই দাবি যুক্তিসঙ্গত নয় বলেও জানান রজতবাবুরা।
যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্ট অভিযোগে জানিয়েছেন, তিনি কোনও রকমে রক্ষা পেয়েছেন। এর পরেও ধরতে হবে গাড়িটি বিপজ্জনক গতিতে চলছিল না?’’