Belur

দাদা-দিদির দেহ ঘরে নিয়েই দশ দিন বিছানায় শুয়ে প্রৌঢ়া

যে ঘরে অমিতাদেবী শুয়ে ছিলেন, সেখানকার বারান্দার দিকের দরজার সামনেই পড়ে রত্নাদেবী। দু’টি দেহেই পচে পোকা ধরে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৫
Share:

এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় জোড়া দেহ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ঘরের দরজার সামনে পড়ে রয়েছেন দিদি। বারান্দার জানলার কাছে চিৎ হয়ে শুয়ে দাদা। দু’জনেই মৃত। দেহে পচন ধরেছে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ছোট বোনের। প্রায় দশ দিন ধরে ঘরের বিছানাতেই শুয়ে রয়েছেন ওই প্রৌঢ়া!দুর্গন্ধ পেয়ে বুধবার বিকেলে পুলিশে খবর দেন প্রতিবেশীরা। দরজা ভেঙে দেখা যায় ওই অবস্থা। ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোডে। মৃতদের নাম মনোরঞ্জন সেন (৮০) ও রত্না সেন (৭৫)। জীবিত রয়েছেন তাঁদের বোন অমিতা সেন (৬০)। তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) প্রবীণ প্রকাশ বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে তবেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব। তবে প্রাথমিক ভাবে কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’

Advertisement

প্রায় পাঁচ কাঠা জমিতে দোতলা বাড়ি মনোরঞ্জনবাবুদের। তাঁরা চার ভাই ও পাঁচ বোন ছিলেন। ভাইদের কেউই বিয়ে করেননি। তবে দুই বোনের বিয়ে হয়েছিল। সেজ ও ছোট ভাই আগেই মারা গিয়েছেন। বড় দাদা চিত্তরঞ্জনবাবুরও মৃত্যু হয় সাত-আট বছর আগে। তার পর থেকে ওই গোটা বাড়িতে থাকতেন মনোরঞ্জনবাবু ও তাঁর দুই বোন রত্না এবং অমিতা। প্রতিবেশীরা জানান, ওই তিন জন কারও সঙ্গেই মিশতেন না। অলকেশ ঢ্যাঙ নামে এক পড়শি বলেন, ‘‘মনোরঞ্জনবাবু বাজার-দোকানে গেলেও পাড়ার কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। রেলে চাকরি করতেন।’’

স্থানীয়েরা জানান, দিন পনেরো আগে বাড়ির সামনেই পড়ে যান ওই বৃদ্ধ। প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করলেও সাড়া দেননি রত্নাদেবীরা। অগত্যা কয়েক ঘণ্টা বাড়ির সামনেই শুয়ে ছিলেন মনোরঞ্জনবাবু। স্থানীয় যুবক গুরুগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ওই দিন শেষে পুলিশ এবং ওঁদের আত্মীয়দের খবর দিই। তাঁরা এসে মনোরঞ্জনবাবুকে ঘরে ঢুকিয়ে দেন। এ দিন খুব দুর্গন্ধ পেয়ে সন্দেহ হয়।’’ পুলিশ এসে ওই যুবকদের নিয়ে কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভেঙে দোতলায় যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: কফি দিবসে জয়যাত্রার দ্বিতীয় ইনিংস

প্রতিবেশী প্রদ্যোত ঘোষ জানান, বাড়িতে ঢুকে দেখা যায়, একটি ঘরের খাটে শুয়ে অমিতাদেবী। তাঁকে বার বার ডাকা হলেও শুধু ‘কে, তোমরা কে’ ছাড়া আর কোনও কথা বলেননি। ওই ঘর লাগোয়া বড় বারান্দায় গিয়ে দেখা যায়, টেবিলে ছড়িয়ে স্টিলের বাসন। জানলার কাছে পড়ে মনোরঞ্জনবাবু। আর যে ঘরে অমিতাদেবী শুয়ে ছিলেন, সেখানকার বারান্দার দিকের দরজার সামনেই পড়ে রত্নাদেবী। দু’টি দেহেই পচে পোকা ধরে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: এসএসকেএমে আইভিএফ উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়তে অনুমোদন

ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সব ক’টি জানলা ও বারান্দার গ্রিল মোটা প্লাস্টিক দিয়ে আটকানো। মনোরঞ্জনবাবুর ভাগ্নে দেবেশ্বর দে বললেন, ‘‘মামা যে দিন পড়ে গিয়েছিলেন, সে দিন এসেছিলাম। ফোন করলেও ওঁরা ধরতেন না। মাসিরা স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত ছিলেন।’’ তিনি আরও জানান, ঘর-বিছানা ছেড়ে বারান্দায় শোয়ার জন্যই জানলাগুলি আটকে রেখেছিলেন মনোরঞ্জনবাবুরা। অর্ধেক দিন রান্নাও করতেন না তাঁরা।সন্ধ্যায় অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার সময়ে অমিতাদেবী বললেন, ‘‘অনেক দিন কিছু খাইনি। মাঝে দিদি এক দিন রান্না করেছিল। কালই তো ওঁদের সঙ্গে কথা হল। দিদির গায়ে চাদরটা দিয়ে দিও!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement