Crime

চেয়ারে বসা, গলার নলি কাটা, ব্রড স্ট্রিটের বাড়িতে খুন বৃদ্ধ

আততায়ী বা আততায়ীরা কী ভাবে ভিতরে ঢুকল? তদন্তকারীরা দু’টি সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ১৪:৩১
Share:

এই বাড়িতেই খুন হন বৃদ্ধ বিশ্বজিৎ বসু। —ফাইল চিত্র

প্রায় সাত ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এক তলা বাড়ি। সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। কিন্তু শোওয়ার ঘরের দরজা ভেজানো। সেখানেই ঘরের মধ্যে চেয়ারে বসা অবস্থায় পাওয়া গেল এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ।

Advertisement

বৃদ্ধের গলায়, কপালে এবং ঘাড়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। চেয়ারের পাশেই মেঝেতে পড়ে একটি রক্তমাখা ছুরি।

শহরের অভিজাত ব্রড স্ট্রিটের এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেধেছে। গোয়েন্দাদের একাংশ নিশ্চিত যে এটা খুনের ঘটনা। কিন্তু যে ভাবে বৃদ্ধ বসেছিলেন এবং তাঁর পাশে যে ভাবে ছুরিটা পাওয়া গিয়েছে, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তবে গলার পাশাপাশি ঘাড়ে এবং কপালের আঘাতের চিহ্ন দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, খুনই করা হয়েছে বিশ্বজিৎ বসু নামে বছর ৬৫-র ওই বৃদ্ধকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নারদ কাণ্ডে পুলিশ কর্তা মির্জাকে জেরা সিবিআইয়ের​

৪২/১ ব্রড স্ট্রিটের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা এই বসু পরিবার। বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গড়িয়াহাটের কাছে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন বিশ্বজিৎবাবু। কয়েক বছর আগে অবসর নেওয়ার পর থেকে তিনি বাড়িতেই থাকতেন। সঙ্গে থাকতেন তাঁর ছোট মেয়ে। আশপাশের বহুতলের ভিড়ে বসুদের বাড়িটাই একমাত্র এক তলা। টালির চালের বাড়িটার চারপাশে রয়েছে উঁচু পাঁচিল। ভিতরে বেশ খানিকটা ফাঁকা জমি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১২টা নাগাদ কড়েয়া থানায় ফোন করেন বিশ্বজিৎবাবুর ছোট মেয়ে। তিনি পুলিশকে জানান, বাড়ির সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বাড়ির ভিতরে বাবা থাকার কথা। কিন্তু তিনি সাড়া দিচ্ছেন না। খানিক ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে এবং তাঁরা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, সদর দরজা বন্ধ থাকলেও বৃদ্ধের ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ভিতরে আলোও জ্বলছিল। আর সেই ঘরেই চেয়ারের উপর বসা অবস্থায় পাওয়া যায় বৃদ্ধের নিথর দেহ। মাথাটা ঝুলে ছিল সামনের দিকে। চারপাশে থকথকে রক্ত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ দেখে, বৃদ্ধের গলায়, মাথায় এবং ঘাড়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন।

আরও পড়ুন: মু্ম্বইয়ে বিমানসেবিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার সহকর্মী​

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘর লণ্ডভণ্ড অবস্থায় ছিল। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, এখনও স্পষ্ট নয় ক’জন আততায়ী ছিল। তবে তারা যে কিছু খুঁজছিল তা স্পষ্ট ঘর লণ্ডভণ্ড দেখে। তবে তদন্তকারীদের অবাক করেছে বৃদ্ধের দেহ দেখে। এক তদন্তকারী দাবি করেন, দেহে ধস্তাধস্তি বা আততায়ীদের বাধা দেওয়ার তেমন কোনও চিহ্ন নেই। সে ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আততায়ীরা পরিচিত কেউ? সেই কারণেই কি এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে আঁচ করতে পারেননি বৃদ্ধ?

দ্বিতীয় প্রশ্ন আসে, আততায়ী বা আততায়ীরা কী ভাবে ভিতরে ঢুকল? তদন্তকারীরা দু’টি সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন। এক, আততায়ীরা সদর দরজা দিয়েই ঢুকেছিল। হয়তো পূর্ব পরিচয়ের জেরে বৃদ্ধ দরজা খুলে দেন এবং তার পর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেন। সে ক্ষেত্রে আততায়ী বা আততায়ীরা খুনের পর পাঁচিল টপকে পালিয়ে গিয়েছে এমনটাই ধারণা পুলিশের। দ্বিতীয় সম্ভাবনা, আততায়ী পাঁচিল টপকেই ঢুকেছিল এবং সেই পথেই পালিয়েছে।

বাসিন্দাদের দাবি, বসু পরিবারের সঙ্গে পাড়ার বাকিদের কার্যত কোনও যোগাযোগ ছিল না। তাঁরা একদমই মিশুকে ছিলেন না। লোকজন এড়িয়েই চলতেন। বৃদ্ধের স্ত্রী রত্না দীর্ঘ দিন আগেই মারা গিয়েছেন। বড় মেয়ে জয়িতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে বিজয়িতা থাকতেন বৃদ্ধের কাছে। বৃদ্ধের দিদিও ওই একই পাড়াতে থাকেন, তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না ওই পরিবারের, এমনটাই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: ফের রেপো রেট কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কমতে পারে গৃহঋণ-সহ অন্যান্য সুদের হার​

খুনের মোটিভ বা উদ্দেশ্য নিয়েও ধন্ধে গোয়েন্দারা। কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন। তাঁরা ‘সিন অব ক্রাইম’ বা অপরাধস্থল দেখে অনুমান করছেন, লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন। কিন্তু সেই সম্ভাবনার সঙ্গে বৃদ্ধের মৃত্যুকালীন অবস্থান মিলছে না। কোনও দুষ্কৃতী লুঠের উদ্দেশ্যে ঢুকলে বৃদ্ধ বাধা দিলে খুনের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বৃদ্ধ আততায়ীকে বাধা দিয়েছিলেন এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। সেখান থেকেই বার বার জোরাল হচ্ছে, আততাতী হয়তো পরিচিত।

সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস ধরেই কিছু প্রোমোটার বৃদ্ধকে চাপ দিচ্ছিলেন ওই জমি বহুতল নির্মাণের জন্য দিতে। বেশ কয়েক বার প্রোমোটার এবং তাঁদের লোকজন ওই বাড়িতে যে এসেছেন তা প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন পুলিশকে। এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তারা বৃদ্ধের মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে। তবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে রহস্য কিছুটা কাটবে, হয়তো কিনারার সূত্র মিলবে। তবে এখনও পর্যন্ত এই হত্যারহস্যে কোনও উল্লেখযোগ্য সূত্র নেই গোয়েন্দাদের হাতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement