রেশন ‘দুর্নীতি’তে ধৃত বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। —ফাইল চিত্র।
রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় আবার সক্রিয় ইডি। কলকাতার অন্তত ছয়টি জায়গায় সোমবার সকাল থেকে তারা তল্লাশি চালাচ্ছে। এই মামলায় ধৃত বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অরবিন্দ সিংহের অফিসেও গিয়েছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। অরবিন্দের অফিস সল্টলেকে। পাশাপাশি, চৌরঙ্গি এলাকায় আঢ্যদের একটি অফিসে হানা দিয়েছে ইডি।
চৌরঙ্গির এই অফিসে ইডি হানা দিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
শঙ্করের ৯০টির বেশি ফরেক্স সংস্থা (বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার সংস্থা) রয়েছে বলে আদালতে দাবি করেছিল ইডি। তবে সেই সংস্থাগুলির সবক’টি শঙ্করের নামে নেই। রয়েছে তাঁর আত্মীয়, পরিজন এবং পরিচিতদের নামে। এই সংস্থার মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা শঙ্কর বিদেশে লেনদেন করেছেন বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। অভিযোগ, টাকা আগে বিদেশি মুদ্রায় (মূলত ডলারে) পরিবর্তন করে তার পর তা দুবাইয়ে পাঠানো হয়েছে। কখনও টাকা সরাসরি দুবাই পৌঁছেছে, কখনও গিয়েছে বাংলাদেশ হয়ে।
গত ৫ জানুয়ারি সকালে বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। প্রায় ১৭ ঘণ্টা তল্লাশির পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শঙ্করকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা।
আদালতে ইডি দাবি করেছিল, শঙ্কর রেশন মামলায় ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর ঘনিষ্ঠ। হাসপাতালে মন্ত্রীর সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে শঙ্কর যোগাযোগ রেখেছিলেন বলেও ইডি দাবি করে। সেই চিঠি তাদের হাতে এসেছে। তাতে টাকার হিসাব লেখা ছিল। হাতের লেখা পরীক্ষার বন্দোবস্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
অন্য দিকে, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বার বার শঙ্কর সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন, তিনি জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রীর যোগই নেই। যদিও ইডির বক্তব্য, মন্ত্রীর ফোন ঘেঁটে শঙ্করের সঙ্গে একাধিক ফোন কলের তথ্য তারা পেয়েছে, যা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়।
কিছু দিন আগে পুরসভায় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। লেকটাউনে তাঁর দু’টি বাড়িতে দীর্ঘ ক্ষণ তল্লাশি চলে। সেই সঙ্গে একই দিনে ইডি গিয়েছিল তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের বৌবাজারের বাড়ি এবং বিরাটীতে আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতেও।
এর আগে রেশন মামলায় গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতেও গিয়েছিল ইডি। সেখানে তাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে মার খান ইডি আধিকারিকেরা। তিন জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয়। সে দিন শাহজাহানের দেখা পায়নি কেন্দ্রীয় সংস্থা। এখনও পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। ওই ঘটনার পর সোমবার আবার রেশন মামলায় তল্লাশি অভিযানে বেরিয়েছে ইডি।