নিউটাউনের এই অভিজাত আবাসনেই ফ্ল্যাট রয়েছে প্রসন্ন রায়ের। সেখানেই হানা দিয়েছে ইডি। বাইরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
শহরের একাধিক জায়গায় ফের ইডির অভিযান। বৃহস্পতিবার সকালে প্রাথমিকের নিয়োগ ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের ফ্ল্যাটে হানা দিল ইডি। সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ নিউটাউনের একটি অভিজাত আবাসনে হানা দেয় ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এই অভিজাত আবাসনেই ফ্ল্যাট রয়েছে প্রসন্নের। সকাল থেকে শহরের মোট সাতটি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির আধিকারিকেরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে খবর, এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্তেই বৃহস্পতিবার শহরের সাত জায়গায় হানা দিয়েছে দিয়েছে তারা।
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবারের তল্লাশি অভিযানের সূত্র ধরে এ বার এসএসসি ‘দুর্নীতি’কাণ্ডের তদন্তেও সক্রিয় হল ইডি। এত দিন তারা প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করছিল। বৃহস্পতিবার সকালে প্রসন্নের ফ্ল্যাট ছাড়াও তল্লাশি চলছে আরও একটি আবাসনে। ইডি সূত্রে খবর, সেখানে প্রসন্নের অফিস ছিল। নিউটাউনের দু’টি জায়গা এবং নয়াবাদের একটি জায়গাতেও তল্লাশি চলছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ইডির মোট ছ’টি দল তল্লাশি অভিযানে বেরোয়। সঙ্গে রয়েছেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। সন্দেশখালির ঘটনার পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকদের বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা গিয়েছিল। গত শুক্রবারের তল্লাশি অভিযানের মতো বৃহস্পতিবারও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সকলের মাথায় হেলমেট দেখা গিয়েছে। জওয়ানদের সঙ্গে আছে কাঁদানে গ্যাসের সেল।
প্রসন্নের পাশাপাশি একদা তাঁর সহকারী প্রদীপ সিংহের বাড়িতেও হানা দিয়েছে ইডি। প্রদীপ নিয়োগকাণ্ডে আর এক ধৃত শান্তিপ্রসাদ সিন্হার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন বলে এর আগে দাবি করেছিল সিবিআই। প্রদীপের বাড়ি ছাড়াও ইডির তদন্তকারীরা নয়াবাদ এলাকায় রোহিত ঝা নামে এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়িতেও হানা দিয়েছেন। দুপুরের দিকে নিউটাউনের পাথরঘাটা এলাকায় প্রসন্নের একটি বাগানবাড়ির সন্ধান পায় ইডি। ইডির একটি দল দুপুরের পর সেখানে তল্লাশি শুরু করে। ইডি সূত্রে খবর, প্রসন্নের ওই বাগানবাড়িতে মালি এবং তাঁর পরিবার থাকে।
তবে প্রসন্নের অফিসে এখনও ঢুকতে পারেননি ইডির আধিকারিকেরা। তাঁরা চাবির জন্য অপেক্ষা করছেন।
কে এই প্রসন্ন? এসএসসি নিয়োগের উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিন্হার ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন এই প্রসন্ন। আবার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে শোনা গিয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীন। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দু’টি মামলার তদন্তে নেমে তাঁর নাম পেয়েছিল সিবিআই। গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলা এবং নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত প্রসন্নকে গ্রেফতারও করে সিবিআই। তবে গ্রেফতার করা হলেও প্রসন্নের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত বিচার শুরু হয়নি। এমনকি, চার্জশিট দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও তার প্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ না করায় বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন প্রসন্ন। বেশ কিছু শর্ত দিয়ে সিবিআইয়ের মামলায় তাঁকে জামিন দেয় শীর্ষ আদালত।
আপাতত জামিনে মুক্ত প্রসন্ন। তবে ইডি সূত্রে খবর, প্রসন্ন একাধিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রসন্ন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বহু সম্পত্তি রয়েছে বলেও ওই সূত্রের খবর।