কুন্তলের জামিনের বিরোধিতা করে হাই কোর্টে নয়া দাবি ইডির। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযানের পর হুগলির তৎকালীন তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কিন্তু গ্রেফতারির পরেও হুগলির বলাগড়ের বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘দুর্নীতির টাকা’ ঢুকেছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের। সম্প্রতি জামিনের জন্য কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন কুন্তল। তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে বুধবার ইডির তরফে জানানো হয়, তৃণমূলের তৎকালীন যুব নেতাকে গ্রেফতার করার কয়েক দিন পরেও তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ঢোকে। ওই টাকার উৎস সম্পর্কে এখনও সদুত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত। বস্তুত, বুধবারই কুন্তলের জামিন মামলার শুনানি শেষ হয়েছে হাই কোর্টে। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ রায়ঘোষণা স্থগিত রেখেছেন।
প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নাম জড়ায় কুন্তলের। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তথা নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেন, ৩২৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন কুন্তল। বাঁকা পথে তৎকালীন যুবনেতার কাছে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি টাকারও বেশি পৌঁছয় বলে দাবি করে সেই সংক্রান্ত কিছু তথ্যপ্রমাণও তদন্তকারীদের হাতে দেন তাপস।
তার পর এক বছরের বেশি সময় কেটেছে। এখনও জেলবন্দি কুন্তল। জামিন চেয়ে এর আগে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু শীর্ষ আদালত ওই মামলা হাই কোর্টে ফেরত পাঠায়। কুন্তলের আইনজীবী আদালতে যুক্তি দেন, প্রাথমিকের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্য জামিন পেয়েছেন। তাঁর মক্কেলকেও জামিন দেওয়া হোক। তিনি এ-ও জানান, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিচার শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। পাশাপাশি তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি। ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘কুন্তল দেড় বছর জেলে রয়েছেন। এই অবস্থায় জামিন পেলে তাঁর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করাও তো সম্ভব নয়।’’
অন্য দিকে, কুন্তলের জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে সওয়াল করেন ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তাঁর বক্তব্য, কুন্তলের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারির পরেও তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেড় কোটি টাকার বেশি ঢুকেছে। মানিক জামিন পেয়েছেন বলে কুন্তলও পাবেন, এই যুক্তি ঠিক নয়। আইনজীবী এডুলজি বলেন, ‘‘মানিককে শুধুমাত্র ইডি গ্রেফতার করেছিল। তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করেনি। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৪৭৯(২) ধারায় বলা রয়েছে, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে একের বেশি মামলা বিচারাধীন থাকলে জামিন প্রযোজ্য হবে না। নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের বিরুদ্ধে একের বেশি মামলা রয়েছে।’’