ফাইল চিত্র
কখনও জমি-জট, কখনও যাত্রাপথ বদল, কখনও হেরিটেজ আইনের গেরো। শুরু থেকেই একের পর এক বাধা যেন সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। কতটা কাকতালীয় ভাবেই কি সেই বাধা টপকাতে পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত মেট্রোর প্রথম পর্বের উদ্বোধনের জন্য ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ বেছে নিলেন রেল বোর্ডের কর্তারা? মেট্রোকর্তারা এ নিয়ে মুখ না খুললেও সোমবার রেল বোর্ডের বার্তা পাওয়ার পরে কার্যত ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে তাঁদের।
উল্লেখ্য, প্রথম থেকে নানা বিপত্তিতে ঠোক্কর খেয়েছে এই প্রকল্প। প্রথম পর্বের নির্মাণকাজে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দত্তাবাদের কাছে জমি-জট। অথচ তত দিনে সুভাষ সরোবর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ সম্পূর্ণ। প্রায় বছর দুয়েক থমকে থাকার পরে করুণাময়ী থেকে বেঙ্গল কেমিক্যাল হয়ে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত মেট্রো পৌঁছনোর জট কাটে। কিন্তু তার পরেও পিছু ছাড়েনি সমস্যা। দেরির কারণে রেক নির্মাণকারী সংস্থার ছেড়ে যাওয়া থেকে সিগন্যালিংয়ের উপকরণ দেরিতে পৌঁছনো— তালিকা বেশ দীর্ঘ। এক সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, এই পথে ট্রেন আদৌ ছুটবে কি না তা নিয়েই সন্দিহান ছিলেন অনেকে। এমনকি যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলার পরেও আধিকারিকদের কেউ কেউ পরিষেবা চালুর জন্য আরও সময় চেয়ে নিয়েছেন।
এ সব সামলে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ যখন পার্ক স্ট্রিটের মেট্রো ভবনে রেল বোর্ডের কর্তাদের ফোন এসে পৌঁছয়, তখন যেন নিজেদের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মেট্রোর কর্তারা। পরে দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় নিজেও উদ্বোধনের কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান। তবে কলকাতা মেট্রোর নতুন জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে মনোজ জোশী দায়িত্ব নেওয়ার পরে মেট্রোর তরফেও তৎপরতা বেড়েছিল। পরিষেবা শুরু করার বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা মনোজবাবু বারবার রেল বোর্ডকে জানিয়েছিলেন বলে খবর। সেই মতো বিভিন্ন প্রস্তুতির পর্যালোচনা বৈঠকের মাঝেই এ দিন রেলবোর্ডের বার্তা এসে পৌঁছয়। জানা গিয়েছে, রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের হাত ধরেই পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত পরিষেবার উদ্বোধন হবে।
সব বাধার পাশাপাশি মেট্রোর জট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ঝালমুড়ি দৌত্য’ কী ভাবে কাজে এসেছিল, সে কথাও এ দিন জানিয়েছেন বাবুল। তবে ১৩ ফেব্রুয়ারির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, তা এ দিন নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেননি মেট্রো ভবনের কর্তারা। দূরত্ব সরিয়ে উন্নয়নের এই প্রকল্প কেন্দ্র-রাজ্যকে কতটা কাছাকাছি আনতে পারে, সেটাই এখন দেখার।