Coronavirus

Coronavirus: দূষণের কারণে বাড়ছে করোনার ‘বাহন’ সংখ্যা!

ভাসমান ধূলিকণাকে ‘বাহন’ করে সার্স কোভ-২ অনেক দূর পৌঁছে যেতে পারে। বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের একাংশের এই অনুমান নিয়ে আগে চর্চা হয়েছিল।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা বাড়লে পোয়াবারো হয় সার্স কোভ-২-এরও। কারণ, ভাসমান ধূলিকণাকে ‘বাহন’ করে সার্স কোভ-২ অনেক দূর পৌঁছে যেতে পারে। বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের একাংশের এই অনুমান নিয়ে আগে চর্চা হয়েছিল। সেই চর্চাই ফের
ইন্ধন পেয়েছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি শহরের দূষণ-চিত্রের নিরিখে।

Advertisement

গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই) সম্প্রতি কলকাতা,হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি ও হলদিয়া— রাজ্যের ছ’টি শহরকে নিয়ে এক সমীক্ষা করেছে। ওই সমীক্ষার সময়কাল ছিল ১ জানুয়ারি, ২০১৯ থেকে ২ জানুয়ারি, ২০২২। যা থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিটি শহরেই বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০), অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) পাশাপাশি যানবাহনের ধোঁয়া থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড নির্ধারিত মাত্রার থেকে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। এই সমস্যা
প্রত্যাশিত ভাবেই শীতকালে বেশি দেখা গিয়েছে।

অনুমান, এখানেই বেড়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিপদ। কারণ, সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটের সঙ্গে বেরোনো করোনাভাইরাস, ভাসমান ধূলিকণার উপরে ভর করে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে বলে অনুমান বিজ্ঞানী-চিকিৎসকদের একাংশের। পালমোনোলজিস্ট রাজা ধর জানাচ্ছেন, ধরা যাক শহরের কোনও জায়গায় অটো
চলে বেশি। ফলে সেখানে ভাসমান ধূলিকণা-সহ অন্য দূষকের পরিমাণও বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘সে কারণে ওই অঞ্চল বা অন্য দূষিত অঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ন্যাসোফেরিংসে (নাকের পিছনে, ভোকাল কর্ডের উপরে থাকে) ভাইরাল লোড বেশি হয়।
এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কারণ, ভাসমান ধূলিকণায় চেপে ভাইরাস সহজেই সেখানে প্রবেশ করে।’’

Advertisement

সংক্রামক রোগের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এখন ভাসমান ধূলিকণা বাতাসে অনেক ক্ষণ থাকে। সেই সঙ্গে তা অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ায় ভাইরাসও সেই পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এমন তত্ত্বও উঠে এসেছে যে, ধূলিকণায় চেপে ভাইরাস ২৭ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।’’ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব রেসপিরেটরি কেয়ার’-এর প্রাক্তন ভাইস
প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান সদস্য, আর্থার সদানন্ধম বলছেন, ‘‘দূষণ ফুসফুসকে দুর্বল করে। এ ব্যাপারে কোনও সংশয়ই নেই যে, সেই দুর্বল ফুসফুস সার্স কোভ-২ দ্বারা আক্রান্ত হলে অসুস্থতার মাত্রা বেশি হয়।’’

সেখানেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সিএসই-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা। যা জানাচ্ছে, যানবাহনের ধোঁয়াজনিত দূষণের মাত্রার নিরিখে ছ’টি শহরের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। ডিসেম্বরে কলকাতার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের গড় মাত্রা সর্বাধিক, প্রতি ঘনমিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রাম। তার পরে
রয়েছে আসানসোল (৩৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার) ও শিলিগুড়ি (৩৪ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার)। শুধু তা-ই নয়, মধ্যরাতে ট্রাক চলাচলের কারণে শহরের নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের দূষণ বহু ক্ষণ স্থায়ী হয়।

সিএসই-র এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, দিনের ব্যস্ততম সময়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকাকালীন নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের মাত্রাও সমানুপাতিক হারে বেড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ছ’টি শহরের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ব্যস্ততম সময়, যেমন রাত ৬-৮টা পর্যন্ত এর উপস্থিতি সর্বাধিক হয়। দুপুরে এবং সন্ধ্যায় নির্ধারিত মাত্রার থেকে ঘণ্টাভিত্তিক দূষণও কলকাতায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।’’

অতি সূক্ষ্ম ভাসমান ধূলিকণার অবস্থাও তথৈবচ। ২০২১ সালে সাপ্তাহিক পিএম২.৫ দূষণের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, জাতীয় গড়ের তুলনায় কলকাতার দূষণ প্রায় দ্বিগুণ। গত তিন বছরই শহরের দূষণ বার্ষিক নির্ধারিত মাত্রাকেও (পিএম২.৫ প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম) লঙ্ঘন করেছে। যার প্রেক্ষিতে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর (যোধপুর) পালমোনারি বিশেষজ্ঞ নবীন দত্ত জানাচ্ছেন, ‘‘দূষণ, সিওপিডি বা যে কোনও কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ফুসফুসে কোভিড সংক্রমণ নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক এমনকি, প্রাণঘাতী হতে পারে।’’

অবশ্য শুধু কোভিডের কারণেই নয়, এমনি সুস্থতার জন্যও দূষণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।— বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement