Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: মণ্ডপে জনস্রোত, বাস-মেট্রোয় দমবন্ধ ভিড়, করোনাবিধি শিকেয় তুলে ঠাকুর দেখছে শহর

ষষ্ঠীর ভিড় যে পঞ্চমীকেও টেক্কা দিতে চলেছে, তা অবশ্য আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। বাস্তবেও দেখা গেল সেই ছবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

বেলাগাম: ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় একডালিয়া এভারগ্রিনের মণ্ডপের সামনে দর্শনার্থীদের ঢল। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মণ্ডপের সামনে জনস্রোত। নিজস্বী তোলার হুড়োহুড়ি। রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন। সরকারি-বেসরকারি বাসে দমবন্ধ করা ভিড়। সোমবার, ষষ্ঠীর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত করোনা-বিধি শিকেয় তোলা এই ছবিই দেখা গেল শহরের সর্বত্র। ন্যূনতম দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না করে উৎসবের আমেজ গায়ে মাখতে তৃতীয়া থেকেই আমজনতার রাস্তায় নেমে পড়া এবং পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাব তাই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাকেই আরও জোরদার করছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শহরের সচেতন নাগরিক এবং চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ।

Advertisement

ষষ্ঠীর ভিড় যে পঞ্চমীকেও টেক্কা দিতে চলেছে, তা অবশ্য আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। বাস্তবেও দেখা গেল সেই ছবি। এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, রাস্তায় ততই বেড়েছে উৎসাহী জনতার ভিড়। সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে আলগা হয়েছে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। সন্ধ্যা নামতেই যা একপ্রকার লাগামছাড়া রূপ নেয়। কোথাও মণ্ডপের সামনের ব্যারিকেড সরিয়ে ভিতরে ঢুকেই চলল দেদার নিজস্বী তোলা ও প্রতিমা দর্শন। কোথাও আবার ভিড়ের চাপ সামলাতে প্রবেশপথ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হলেন উদ্যোক্তারা। কাজে বেরিয়ে দীর্ঘক্ষণ যানজটে ফেঁসে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। মণ্ডপের সামনের ব্যারিকেড ভাঙা নিয়ে উত্তর কলকাতার এক পুজোকর্তার বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাজ মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া। আদালত ও সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তা করেছি। এখন ব্যারিকেড ভেঙে যদি কেউ ভিতরে ঢোকেন, সেটা দেখা তো আমাদের কাজ নয়! সেটা দেখা যাঁদের কাজ, তাঁরাই দেখবেন।’’ নাম না করে কার্যত তিনি আঙুল তুললেন পুলিশের দিকেই। যদিও এ বিষয়ে এক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘কত জনকে আটকাব বলুন তো! স্রোতের মতো মানুষ তো রাস্তায় নেমে পড়েছে!’’

পুলিশের এই দায়সারা মনোভাবের সুযোগ নিয়েই শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই ভিড় ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ। শ্রীভূমি থেকে একডালিয়া এভারগ্রিন বা সুরুচি সঙ্ঘ— ভিড়ের নিরিখে সকলেই একে অপরকে টেক্কা দিয়েছে। এ ছাড়া, ভিড়ের মধ্যে থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে হাঁটাহাঁটি করা তো আছেই! একডালিয়ার সামনে মাস্ক নামানো এক তরুণীকে প্রশ্ন করতেই তাঁর যুক্তি, ‘‘মাস্ক সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছি। কিন্তু এত সেজেগুজে যদি মাস্কেই মুখ ঢাকলাম, তা হলে সাজগোজের আর কী মানে রইল!’’

Advertisement

এ দিন দুপুরে দর্শনার্থীদের ভিড় অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় এক সময়ে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশপ্রিয় পার্কের পুজো মণ্ডপের মূল প্রবেশপথ। ওই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে অল্প সময়ের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে রাস্তায় যে ভিড় আরও বাড়বে, তা জানাতেই আবার তা খুলে দেওয়া হয়।’’ কিন্তু তার পরেও ভিড়ের চাপ কমেনি। দর্শনার্থীদের ভিড়ে নাজেহাল ত্রিধারার পুজোকর্তা দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘ভিড় তো থামছেই না। আমরা চাইছি যে, এ বছর আমাদের মণ্ডপে কেউ না আসুক। কিন্তু সে কথা কেউ শুনছেনই না! ষষ্ঠীতেই এই অবস্থা হলে অষ্টমী-নবমীতে কী হবে, সেটাই ভাবছি।’’

পুজোর বাকি দিনগুলিতেও এই একই ছবি দেখা গেলে পরিস্থিতি কী হতে চলেছে, সেই আশঙ্কার কথা শোনা গেল মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মুখেও। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ এমন বেপরোয়া ভাবে ঘোরাঘুরি করছেন যে, এখনই সচেতন না হলে ফের করোনার ভয়ঙ্কর রূপ দেখা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’

কিন্তু পুজোর দিনে বিধি বলবৎ করার ক্ষেত্রে কী করছে পুলিশ? লালবাজারের এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘আদালত ও সরকারের বিধি বলবৎ করতে শহরে বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। বিধিভঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে সচেতনও করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement