প্রতীকী ছবি
করোনা ও আমপানের জেরে এ বছর আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে ছোট-বড় সমস্ত পুজোই। তার মধ্যে ছোট পুজোগুলির অবস্থা খুবই শোচনীয়। এ বার তাই সঙ্কটে পড়া ছোট কয়েকটি পুজোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল একটি বড় পুজো। যাতে কোনও পুজোই একেবারে বন্ধ না হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন বা স্পনসর এ বার নেই বললেই চলে। যতটুকু আছে, তার বেশির ভাগই বিভিন্ন বড় পুজোর দখলে। টানা ছ’মাস লকডাউনের জেরে ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা নেই। তার উপরে বাজারে সব কিছুরই দাম আগুন। ছোট পুজোর কর্তাদের কপালে তাই ভাঁজ। এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করা ছাড়া পথ নেই। কিন্তু তাতে কত টাকাই বা উঠবে! এই বাজারে একটা বারোয়ারি পুজো খুব ছোট করে করলেও অন্তত দেড় লক্ষ টাকার ধাক্কা। এ বছর সেই টাকাটা জোগাড় করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমনই যে, পুজো বন্ধ করে দিতে হয় কি না, সেই চিন্তাও করছিলেন কেউ কেউ।
কিন্তু আশপাশের কোনও ছোট পুজোই যাতে বন্ধ না হয়, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক। নিজেদের বাজেট কাটছাঁট করে এলাকার ছোট পুজোগুলিকে আর্থিক সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। এর পাশাপাশি, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের একটি গ্রামের পুজোর দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তাঁরা।
এসবি পার্কের পাশের গলির পুজো পূর্ব বড়িশা গভর্নমেন্ট কলোনি পুজো কমিটির তরফে অলোক দাস বললেন, ‘‘আমাদের আর্থিক সাহায্য করা ছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে নানা রকম সেবামূলক কাজ করছে ওই পুজো কমিটি।’’
এসবি পার্কের উল্টো দিকেই ঠাকুরপুকুর তিনের পল্লি দুর্গাপুজো। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা থাকে পুজোর বাজেট। কিন্তু এ বছর বিজ্ঞাপনই তো নেই। চাঁদাও তোলেন না তাঁরা। ওই পুজোর পাশেও দাঁড়িয়েছে এসবি পার্ক। তিনের পল্লির তরফে সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গত কয়েক বছরে এসবি পার্ক আমাদের নানা ভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু এ বছর একেবারে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’’
তিনের পল্লির মতো বড়িশা তপোবন ক্লাব শীলপাড়া পুজো কমিটির পাশেও দাঁড়িয়েছে এসবি পার্ক। আগে বড়িশা তপোবন এলাকার বড় পুজো বলেই গণ্য হত। কিন্তু এখন বাজেট দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। এ বছর সেটা জোগাড় করাও কঠিন। ওই পুজোর তরফে দেবাশিস মিত্র বললেন, ‘‘সঙ্কটের এই সময়ে চিন্তায় ছিলাম। ওঁরা পাশে এসে দাঁড়ানোয় রক্ষে।’’
এক দিকে করোনা সঙ্কট। অন্য দিকে, আমপানে প্রায় সবই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের কুলতলির শ্যামনগর গ্রামে। এমনিতেই খুব কষ্ট করে পুজোর আয়োজন হয় সেখানে। এ বছর তা বন্ধই হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শ্যামনগর পুজো কমিটির তরফে অরুণ মণ্ডল বললেন, ‘‘এসবি পার্ক আমপানের সময়ে আমাদের অনেক ত্রাণ পাঠিয়েছিল। পুজোয় আর্থিক সাহায্য চেয়ে ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওঁরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই সঙ্কটকালেও আমাদের পুজো হবে।’’
এসবি পার্ক পুজো কমিটির তরফে সঞ্জয় মজুমদার বললেন, ‘‘আমাদের বাজেট অনেকটা কাটছাঁট করে ছোট পুজোগুলিকে সাহায্য করা হচ্ছে। পাড়ার কোনও পুজোই বন্ধ হতে দেওয়া যায় না। সব পাড়াতেই ঢাকের আওয়াজ হবে। সঙ্কটের এই সময়ে আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে পাশে থেকে দুর্গাপুজো করব। এটা সবার উৎসব। সবাই একসঙ্গে আনন্দে মাতব। সব জায়গায় আলো জ্বলবে। অন্ধকার থাকবে না কোথাও।’’