পুরসভা পরিচালিত ২৪২টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলগুলিতে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতীকী ছবি।
কলকাতা পুরসভার বেশ কিছু স্কুলবাড়ির ভগ্নদশা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তার উপরে পড়ুয়ার সংখ্যাও দিন দিন কমছে। বর্তমানে ভাড়াবাড়িতে চলা পুর প্রাথমিক স্কুলগুলি নিয়েই চিন্তা বেশি কর্তৃপক্ষের। স্কুলবাড়িগুলির বেহাল দশার পাশাপাশি পড়ুয়ার অভাবে জেরবার পুরসভা আপাতত ছ’টি স্কুল বন্ধ করে অন্যান্য চালু পুর স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের শেষে এ কথা জানিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভার শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, এমন আরও ৩০টি পুর বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে পঠনপাঠন ধাপে ধাপে বন্ধ করতে চায় পুরসভা। পুর শিক্ষা বিভাগের একআধিকারিক বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে পুরসভার বেশ কিছু বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। ওই সমস্ত স্কুলবাড়ির হালও ভাল নয়। পুরসভা ধাপে ধাপে সেগুলি অন্য স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায়।’’
পুরসভার স্কুলবাড়িগুলির বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ বহু পুরনো। কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠক ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্কুলবাড়ির সংস্কারের আর্জি নিয়ে মাসকয়েক আগে পুরসভার মাসিক অধিবেশনে প্রশ্নতুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘‘এজরা স্ট্রিটে একটি তেতলা বাড়ির দোতলায়স্কুলটি ছিল। পুরসভার শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের একাধিক বার জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। আমার ওয়ার্ডের বাচ্চা ছেলেমেয়েদের অনেক দূরের স্কুলে রোজ হেঁটে যেতেহচ্ছে।’’ ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের এজরা স্ট্রিটে পুরসভা পরিচালিত ওই স্কুলবাড়ির এমনই বেহাল দশা যে, সেটি বন্ধ করে দু’কিলোমিটার দূরে বড়তলা স্ট্রিটের অন্য একটি পুর স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
পুরসভা পরিচালিত ২৪২টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলগুলিতে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় পঠনপাঠনেরব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি বিদ্যালয় ভাড়াবাড়িতে চলায় সেগুলি নিয়ে নানাবিধি সমস্যা দেখা দিয়েছে। পুরসভার শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রেই ভাড়াবাড়ির মালিকের সঙ্গে পুরসভার মামলা চলছে। তাই সেই সমস্ত বাড়ির সংস্কারের কাজ শিকেয় উঠেছে।
পুরসভা ইতিমধ্যেই ধাপা ও তপসিয়ায় দু’টি ইংরেজি মাধ্যম মডেল স্কুল চালু করেছে। যদিও প্রশ্নউঠেছে, পড়ুয়ার অভাবে যখন পুর প্রাথমিক স্কুলগুলি ধুঁকছে, তখন মডেল স্কুল চালু করে সুফল মিলবে তো? বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এই সরকার তথা পুরসভা শিক্ষা ব্যবস্থাকেইপুরোপুরি তুলে দিতে চায়। তারই নমুনা এটা।’’
পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা বলেন,‘‘সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই ভাড়াবাড়িতে চলা ছ’টি বিদ্যালয় আপাতত বন্ধ করে অন্যত্র সরানো হবে। বাম আমলে তো প্রাথমিকে ইংরেজি তুলেই দেওয়া হয়েছিল। বিরোধীরা অহেতুক রাজনীতি করছে।’’
মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী আগামী দিনে বাকি পুর প্রাথমিক স্কুলগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুরসভার নিজস্ব স্কুলভবনগুলিও সারাইয়ের কাজ চলছে।