মন্দা: কাজ শুরু হলেও বড় দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত কম আসছে কুমোরটুলিতে। ছবি: সুমন বল্লভ
দুর্গাপুজোর সময়ে এ বছর পরিস্থিতি কেমন থাকবে, পুজোই বা কী ভাবে হবে, আপাতত সবটাই অনিশ্চিত। বড় বড় পুজোর উদ্যোক্তারাও জানেন না, করোনা পরিস্থিতি সে সময়ে কী রূপ ধারণ করবে। সেই কারণে থিম পুজোর পরিকল্পনা আপাতত দূরে সরিয়ে রেখেছেন অনেকেই। কুমোরটুলিতে এ বার তাই যে ক’টি বায়না এসেছে, তার প্রায় সবই একচালার প্রতিমার।
সাধারণত, বৈশাখ মাস থেকেই প্রতিমার বায়না নেওয়া শুরু হয় কুমোরটুলিতে। অন্যান্য বছর রথের দিনই শহরের বড় বড় পুজো কমিটিগুলি কুমোরটুলিতে প্রতিমার বায়না দিতে আসেন। সেখানকার মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু পাল বললেন, ‘‘অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছরটা পুরোপুরি আলাদা। করোনার কথা মাথায় রেখে এ বার এখনও পর্যন্ত অনেকে অর্ডারই দেননি। আবার অন্যান্য বছর যাঁরা থিমের প্রতিমার অর্ডার দিতেন, এ বার তাঁরা স্রেফ একচালার সাবেক প্রতিমার অর্ডার দিয়েছেন।’’
প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল বলেন, ‘‘রথের দিন থেকে এখনও পর্যন্ত ১০টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। সবই একচালার সাবেক ঠাকুর। গত বছর ওই সমস্ত পুজোই থিমের প্রতিমা করিয়েছিল।’’
গড়পার এলাকার একটি নামী ক্লাব প্রতি বছরই থিম পুজো করে। কিন্তু এ বার করোনার কথা মাথায় রেখে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছোট মণ্ডপে একচালার প্রতিমায় পুজো হবে। ওই পুজো কমিটির সভাপতি উৎপল দত্ত বললেন, ‘‘এ বার পুজোর খরচ অর্ধেক ছেঁটে সেই টাকায় আমরা বিপন্ন মানুষকে খাইয়েছি। সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা পুজো করব।’’
কুমোরটুলি পার্ক সর্বজনীনের তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘করোনার জেরে বাজারে চরম অর্থসঙ্কট চলছে। আমরা মণ্ডপের মধ্যে একচালার দুর্গা প্রতিমা রাখব।’’ বেনিয়াটোলা সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক স্বপন কুণ্ডুর কথায়, ‘‘করোনার ভয় তো রয়েছেই। পাশাপাশি, কোনও স্পনসর নেই। সেই কারণে থিম ছেড়ে ছোট মণ্ডপে একচালার সাবেক প্রতিমা নিয়েই পুজো করার কথা ভাবছি।’’
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির তরফে সজল ঘোষ আবার জানালেন, তাঁরা বড় আকারের সাবেক প্রতিমার বায়না দিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক এলাকার একটি বড় পুজো কমিটির কর্ণধার তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমারের কথায়, ‘‘অন্যান্য বছর তো এত দিনে পুজোর মূল পরিকল্পনা তৈরি হয়ে যায়। এ বার আদৌ পুজো হবে কি না, সংশয় রয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি, পুজো হলেও করোনার কথা মাথায় রেখে কোনও রকম জাঁকজমক থাকবে না। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে চলতে বাধ্য আমরা।’’
করোনার ধাক্কায় তাই অন্যান্য বহু পেশার পাশাপাশি মৃৎশিল্পীরাও সঙ্কটে। শিল্পী মিন্টু পালের আবেদন, ‘‘কুমোরটুলি পাড়ায় সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ জন শিল্পী গভীর আর্থিক সঙ্কটে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশে দাঁড়ালে কৃতজ্ঞ থাকব।’’