প্রতীকী ছবি।
শহরের পথে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর বিপজ্জনক প্রবণতা ক্রমেই চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে লালবাজারের কর্তাদের। সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে পরিস্থিতি তবু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকছে। কিন্তু সপ্তাহান্তে এই প্রবণতা কার্যত লাগাম ছাড়াচ্ছে! ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা চালু হতেই গত সপ্তাহের শনি ও রবিবার মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে একশোরও বেশি চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যাই চিন্তা বাড়িয়েছে পুলিশকর্তাদের।
সপ্তাহখানেক হতে চলল, শহরের রাস্তায় ফের চালু হয়েছে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে ওই পরীক্ষা কিছু দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে ফের তা চালু হয়েছে। এবং তার পরেই দেখা গিয়েছে, সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে শহরের রাস্তায় মত্ত চালকদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। কিন্তু সপ্তাহ শেষে, শনি ও রবিবার তাঁদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যায়। শহরে সংক্রমণের লেখচিত্র কিছুটা নিম্নমুখী হতেই সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা। ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের এক কর্মীর কথায়, ‘‘দিনের বেলা পরিস্থিতি তবু কিছুটা আয়ত্তে থাকে। এমনকি, সপ্তাহের কাজের দিনেও ওই প্রবণতা অনেকটা কম দেখা যায়। কিন্তু সপ্তাহ শেষে বা ছুটির দিনে রাত হলেই নিয়ম ভাঙার যেন একটা হিড়িক পড়ে যায়। নৈশ কার্ফুরও পরোয়া করেন না অনেকে। মত্ত অবস্থায় অনেকে এমন ভাবে গাড়ি চালান যে, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানোটাও রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে তো সিগন্যালের পরোয়াও করেন না কেউ কেউ।’’
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার চালু হওয়ার পরে প্রথম শনি ও রবিবার মোট ১১২ জনের বিরুদ্ধে ১৮৫ নম্বর ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শনিবারই মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয় ৬০ জনের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ওই সংখ্যাটা ছিল ৫২। সোমবারও একই ভাবে অভিযান চলেছে। তবে সোমবারের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। ওই দিন ৩৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডেই বিধি ভাঙার ঘটনা সব চেয়ে বেশি ঘটেছে বলে সূত্রের খবর। শনিবার রাতে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে শুধু ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডই ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। রবিবার রাতে সেই সংখ্যাটা ছিল সাত।
গত শনিবার রাতে যাদবপুরে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছিল এক জনের। ওই গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছিলেন আরও কয়েক জন। ঘটনার তদন্তে নেমে চালকের মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রমাণ পান তদন্তকারীরা। শহরের রাস্তায় চালকদের এই বেপরোয়া মনোভাবই বিপদ ডেকে আনছে বলে মত লালবাজারের।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘শহরের রাস্তায় দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো। আর তা বন্ধ করতেই ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে নজরদারিও। শুধু সপ্তাহ শেষে নয়, গোটা সপ্তাহ জুড়েই এই অভিযান চলবে।’’