—প্রতীকী চিত্র।
দোতলা বা তেতলা একটি বাড়ি থাকলেই হল। নীচের তলার খানিকটা অংশ ঝাঁ-চকচকে অফিসঘরের মতো করে সাজিয়ে নিতে হবে। দেওয়ালে থাকতে হবে মাদক নিয়ে সচেতনতার প্রচার সংক্রান্ত ইংরেজিতে লেখা পোস্টার বা ছবি। তবে, ওই অংশ থেকে কোনও ভাবেই যেন বাড়ির বাকি অংশ দেখা না যায়। কোল্যাপসিবল গেট লাগিয়ে বাড়ির বাকি অংশ থেকে অবশ্যই আলাদা করতে হবে এই অফিসঘর! রোগীর বাড়ির লোকজন বা অন্য যে কারও যাতায়াত যেন সীমাবদ্ধ থাকে ওই পর্যন্তই। এ ছাড়া, প্রয়োজন ইন্টারনেটে সংস্থার নাম-ফোন নম্বরটুকু তুলে দেওয়া এবং সোসাইটি আইনে বেসরকারি সংস্থার রেজিস্ট্রেশন!
তার পরেই নেশামুক্তি কেন্দ্র চালু করতে কোনও সমস্যা নেই। এক বার চালু হলে মৌখিক প্রচারেই মাদকাসক্তদের পরিজনদের আসা-যাওয়া শুরু হয়ে যায়। মোটামুটি কিছু দিন চালাতে পারলে কেন্দ্রের অনুদানও মিলতে পারে। এর পরে রোগীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা বুঝে টাকা দাবি করলেই হল! এই ব্যবসায় কোনও লোকসান নেই। দীর্ঘদিন ধরে নেশামুক্তির ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যক্তি একটানা বলে গেলেন কথাগুলো। এর পরে তাঁর দাবি, ‘‘তবে, নেশার পাশাপাশি আরও একটি লাভজনক দিক উঠে আসছে এখন। যে হারে মানুষের অবসাদ বাড়ছে, তাতে শুধু নেশা ছাড়ালে চলবে না, কায়দা করে অবসাদ কমানোর কথাও প্রচার করতে হবে।’’ ওই ব্যক্তির দাবি, মানসিক রোগীদেরও রাখা হয়, এ কথা প্রচার করলে টাকা আসে চার-পাঁচ গুণ বেশি।
কিন্তু এই ভাবে নেশাগ্রস্ত এবং মানসিক রোগীদের রাখা কি আইনসম্মত? জানা গেল, কোনও রকম লাইসেন্স ছাড়াই শুধুমাত্র ‘সোসাইটি অ্যাক্ট, ১৯৬১’-এর জোরেই চলছে এই ধরনের ব্যবসা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ট্রাস্ট তৈরি করে বা স্বামী-স্ত্রীর ‘প্রপ্রাইটারশিপ’-এর মাধ্যমেও এমন কাজ শুরু করে দেওয়া হচ্ছে। এর জেরেই কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো নেশামুক্তি কেন্দ্র গজিয়ে উঠছে বলে খবর। যদিও সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, নেশামুক্তি কেন্দ্রের অনুমতি দেন না তাঁরা। ‘সোসাইটি অ্যাক্ট, ১৯৬১’-এর ভিত্তিতে বা ট্রাস্ট তৈরি করে এমন কেন্দ্র চালানোও যায় না! নেশাগ্রস্ত এবং মানসিক রোগীদের একসঙ্গে রাখাও যায় না। আইনজীবী অরূপ সাহা বললেন, ‘‘মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের কোনও হোমে রাখতে হলে কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই স্বাস্থ্য দফতরের মেন্টাল হেল্থ লাইসেন্স থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে নেশাগ্রস্তদের আলাদা রাখাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু গুটিকয়েক সংস্থা ছাড়া স্বাস্থ্য দফতরের মেন্টাল হেল্থ লাইসেন্স প্রায় কারওই নেই!’’ জানা গিয়েছে, এর পরেও নিয়ম রয়েছে একাধিক। ১৪ ফুট লম্বা, ১২ ফুট চওড়া ঘরে সর্বাধিক তিন জনকে রাখা যাবে। ভবনের জন্য প্রয়োজন দমকলের ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স। সর্বক্ষণের এক জন চিকিৎসক, দু’জন নার্স রাখাও বাধ্যতামূলক। রোগী পরিষেবার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স থাকলে ভাল। থাকতে হবে সিসি ক্যামেরার নজরদারিও।
বাস্তবে এ সব ছাড়াই তা হলে নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি দিনের পর দিন চলছে কী করে? নজরদারিই বা চালাচ্ছে কে? রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘বিষয়টি পুলিশই ভাল বলতে পারবে।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখা হবে।’’ কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকাই বা কী? স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীকে ফোন করা হলে তিনি বৈঠকে ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
(চলবে)