School Dropout

Dropout from school: আজও ফেরা হয়নি স্কুলে, বিস্কুটের কারখানায় কাজ একাদশের ছাত্রের

অতিমারি পর্বের ক্ষত এখনও সারেনি তাঁর পরিবারে। সংসার টানতে তাই তাঁকে কাজ নিতে হয়েছে কারখানায়।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৫:৫৫
Share:

আমতার কারখানায় কর্মরত রাহুল দাস। নিজস্ব চিত্র

অতিমারি পর্বের ক্ষত এখনও সারেনি তাঁর পরিবারে। সংসার টানতে তাই তাঁকে কাজ নিতে হয়েছে কারখানায়। মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও নতুন ক্লাসে আজও যাওয়া হয়নি শ্যামবাজারের দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনের ছাত্র, বছর ঊনিশের রাহুল দাসের। তাঁর সহপাঠীরা যখন নতুন ক্লাসে যাচ্ছে, তিনি তখন অনেক দূরে, আমতার একটি বিস্কুট কারখানায় বিস্কুটের পেটি ট্রাকে তোলার কাজে ব্যস্ত। সেখানেই কারখানার আশপাশে রাত্রিবাস করতে হয় তাঁকে। ফলে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার উপায়টুকুও নেই তাঁর।

Advertisement

শ্যামবাজারের টালা সেতুর কাছে চাকাপট্টির বাসিন্দা রাহুলের বাবা ঝন্টু দাস একটি কারখানায় লরি চালাতেন। কিন্তু করোনার সময় থেকে সেই কাজ আর নিয়মিত পাচ্ছেন না তিনি। ফলে সংসারের হাল ধরতে কাজে নামতে হয় বাড়ির বড় ছেলে রাহুলকে। তিনি বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে বেশি বয়সে স্কুলে ভর্তি হই। কিন্তু মাধ্যমিকের পরে বুঝি যে, সংসার চালাতে শুধু পড়াশোনা করলেই চলবে না, কাজেও নামতে হবে। তাই আমতার এই বিস্কুট কারখানায় বিস্কুটের পেটি ট্রাকে তোলা-নামানোর কাজ নিতে হল। যদিও আমার মন সব সময়ে পড়ে থাকে স্কুলেই।’’

রাহুল জানান, আমতার কারখানার কাছে ঘর ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকেন আরও ৩৫ জন। সকালে কাজে যাওয়ার আগে পালা করে রান্না করার দায়িত্বও মাঝেমধ্যে সামলাতে হয় তাঁকে। সোমবার সকলের জন্য পাঁচমেশালি তরকারি রান্না করতে করতে রাহুল বলেন, ‘‘কারখানা থেকে রাতে ফিরে পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সাহায্য করার তো কেউ নেই। স্কুলের স্যরেরা যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন, তা হলে সুবিধা হত।’’

Advertisement

নতুন ক্লাসে বসার বদলে এখন দিনে কয়েকশো বিস্কুটের পেটি ট্রাকে তোলেন রাহুল। সকাল ৯টায় কারখানায় ঢুকতে হলেও কাজ শেষ হওয়ার কোনও বাঁধাধরা সময় নেই। প্রতি পেটি ট্রাকে তুলে মাত্র ৫০ পয়সা পান রাহুল। সারা মাসে কত পেটি তিনি ট্রাকে তুললেন, সেই হিসাব করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা মতো উপার্জন হয় তাঁর। তবে মন পড়ে থাকে বইখাতার জগতেই। রাহুল বলেন, ‘‘পড়াশোনা কিছুতেই বন্ধ করতে চাই না। কিন্তু স্কুলে যদি এত কম যাই, তা হলে কার কাছে পড়া বুঝব? মাঝেমধ্যে এখন তাই মনে হচ্ছে, স্কুলের পড়াটা চালাতে পারব তো?’’

রাহুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘ছেলেটি মাধ্যমিকে খুব ভাল নম্বর না পেলেও পাশ করেছে। পড়াশোনায় উৎসাহও আছে খুব। আমরাও চাই না ওঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক। ওঁকে বই কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে যতরকম ভাবে সাহায্য করা যায়, তা আমরা করছি। কিন্তু কারখানায় কাজ করলে কী ভাবে স্কুল করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। কয়েকটা মাস দেখি। যদি ওঁর স্কুলে আসতে খুবই অসুবিধা হয় তা হলে কোনও মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেব।’’

তবে একা রাহুলই নন। সুপ্রিয়বাবু জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে এমন বেশ কয়েক জন পড়ুয়া রয়েছে, যারা অতিমারিতে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে এবং এ বারের দীর্ঘ গরমের ছুটিতে অন্যত্র কাজে চলে গিয়েছে। তবে তাদের অনেকেই ধীরে ধীরে স্কুলে ফিরে আসছে।

সুপ্রিয়বাবু জানালেন, শ্যামবাজারের কলকাতা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, বুদ্ধ পাইক নামে দশম শ্রেণির এক পড়ুয়াও এক সময়ে সংসার টানতে একটি সাইকেলের দোকানে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু গরমের ছুটির পরে স্কুলের দরজা খোলার পরে সে ক্লাসে ফিরেছে। সম্প্রতি যে পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা হল, তা-ও দিয়েছে বুদ্ধ। সুপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘রাহুলই শুধু এখনও স্কুলে ফিরতে পারলেন না। ওঁকে স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা করছি সবাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement