ফাইল চিত্র।
ঘোলা জলের যন্ত্রণায় গত রবিবার থেকে হয়রান উত্তর কলকাতা ও দমদমের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। বুধবার পুরসভার জলে ঘোলা ভাব তুলনায় কমলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। এ দিনও অনেকে জল কিনে খেয়েছেন। জলের চাপ কম থাকায় উত্তর কলকাতার কিছু জায়গায় প্রয়োজন মতো জল মেলেনি বলে অভিযোগ। পুরসভার জলের গাড়িও এ দিন আসেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। দমদমেও কিছুটা উঁচু এলাকায় ঢাল এবং দূরত্বের কারণে জল সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
সমস্যার কথা স্বীকার করে কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বুধবার বলেন, ‘‘জলের চাপ কম থাকায় মূল রাস্তার বাসিন্দারা জল পেলেও গলির বাসিন্দাদের জল পেতে সমস্যা হয়েছে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ছাড়াও দুপুর ও বিকেলেও জল সরবরাহ করা হয়। তবে উত্তর কলকাতার বেশ কিছু অংশে সকালের প্রথম অর্ধে পরিষ্কার জল মিললেও শেষে ঘোলা জল বেরিয়েছে। এ দিন উল্টোডাঙা, মানিকতলা, ট্যাংরার বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের জলের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয়। অভিযোগ, যে সময়ে জল আসার কথা, সেই সময়ে আসছে না। আবার সময় শেষ হওয়ার আগেই সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের অনেকেই এ দিনও জল কিনে খেয়েছেন। কেউ আবার জল ফুটিয়ে খাচ্ছেন। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবে কত দিন চলবে?
জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পলতা জল প্রকল্প থেকে পরিস্রুত জল টালা জলাধারে আসে। গঙ্গার জলে ঘোলা ভাব বেশি থাকায় এখন পলতা জল প্রকল্পে পরিশোধনের পরিমাণ সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হচ্ছে। টালার জলাধারে বেশি জল জমা থাকছে না। সেখানে জলের স্তর একটু কমে গেলেই পাইপলাইনে পাঠানো জলে ঘোলা ভাব থাকছে।’’ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও দিন দুয়েক সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা।
দমদমের তিনটি পুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন জল সরবরাহ করা হলেও তার পরিমাণ অনেক কম। জলের ঘোলা ভাবও পুরো কাটেনি। তবে বুধবার বিকেলের পরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তিন পুরসভা। দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশা করা যায় বৃহস্পতিবারের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে।’’ পুর কর্তৃপক্ষ জানান, গঙ্গার জল সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। জলের ট্যাঙ্কারও পাঠানো হয়েছে। তবে ঢাল, দূরত্ব এবং তুলনায় উঁচু জায়গায় অবস্থানের কারণে বেশ কিছু ওয়ার্ডে সরবরাহে সমস্যা থাকছে। বাসিন্দাদের দাবি, এই সমস্যা নতুন নয়। আরও অভিযোগ, বেশি চাহিদার কারণে এ দিনও জল কিনতে গিয়ে ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁদের। পুরসভার মুখ্য প্রশাসক জানান, তাঁরা সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
দমদম ও উত্তর দমদম পুর এলাকার ছবিও কম-বেশি এক। গঙ্গার জল সরবরাহ করার কাজ শুরু হলেও তার পরিমাণ কম ও ঘোলা বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তর দমদমের ১০-১২টি ওয়ার্ডে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। এ দিন সেখানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দমদম পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য বরুণ নট্ট এবং উত্তর দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসক বিধান বিশ্বাস জানান, জল কিছুটা ঘোলা রয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।