সামনে ও পিছনে দু’টি গেট নিয়ে চলে এল-২৩৮ রুটের বাস। বারাসত চাঁপাডালি বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
এল-২৩৮।
বারাসত–হাওড়া রুটের মধ্যে চলাচলকারী এই বাসের নাম শুনলে আতঙ্কে ভোগে দমদমের বাসিন্দা একটি পরিবার। কয়েক মাস আগেই ওই রুটের একটি বাসের প্রথম দরজা থেকে পড়ে গিয়ে দ্বিতীয় গেটের চাকার নীচে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের ছেলের।
শহর ও লাগোয়া এলাকায় চলাচলকারী বাসরুটগুলির মধ্যে এই রুট ছাড়া আর কোনওটিতে দু’টি করে দরজা-সহ বাস তেমন দেখা যায় না। বারাসতের তিতুমীর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসটি চলাচল করে। বাসমালিকদের অভিযোগ, শ্রমিক সংগঠনগুলির চাপে তাঁরা বাসের কাঠামো বদল করতে পারছেন না। এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থও হয়েছেন তাঁরা।
বাসমালিকেরা জানাচ্ছেন, যাত্রী নিরাপত্তা-সহ বেশ কিছু কারণ পর্যালোচনা করে ২০০৯ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার যাত্রিবাহী বাসগুলিকে দুই থেকে এক দরজার গাড়িতে রূপান্তরিত করতে নির্দেশ দেয়। এমনকি, তৃণমূল সরকারও সেই নির্দেশে কোনও বদল আনেনি। রাজ্যের সিংহভাগ যাত্রিবাহী বাসকেই এক দরজার গাড়িতে বদলে ফেলা গেলেও এল-২৩৮ রুটের বাসগুলি দুই দরজারই থেকে গিয়েছে। বাস সংগঠনগুলির পাল্টা দাবি, বারাসত থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ওঠেন এল-২৩৮ রুটের বাসেই। এক দরজার বাস হলে যাত্রীদের নামা-ওঠায় সমস্যা হবে।
এক বাসমালিক দমদমের ওই ছাত্রের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘এক দরজার বাসে চাকার অবস্থান এমন থাকে যে, কেউ গেট থেকে পড়ে গেলে চাপা পড়ার ঝুঁকি কম হয়। এক মাত্র আমাদের রুটটিতেই এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।’’ বাসমালিকেরা শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতায় যেতে না চাওয়ায় প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না। তবে বাসমালিকদের সংগঠন ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘যাত্রী নিরাপত্তার জন্য এক দরজার বাস জরুরি। বর্তমান যুগে এমন বাসই সর্বত্র চলছে।’’
বাসমালিকেরা জানান, ওই রুটে এখন ৪৮টি বাস চলছে। ১৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কারণে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একাধিক বাস বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একাংশের অনমনীয় মনোভাবের জন্য নতুন ধরনের এক দরজার বাস নামানো সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা জানান, এক দরজার বাস চালু হলে দ্বিতীয় দরজার কন্ডাক্টরেরা কর্মহীন হবেন— এমন যুক্তি খাড়া করা হচ্ছে সংগঠনের তরফে। যদিও তাঁদের প্রশ্ন, অন্যান্য রুটের বাসের কাঠামো পরিবর্তনের সময়ে কেন সেই যুক্তি সংগঠনের কাছে গুরুত্ব পেল না? সূত্রের খবর, চারটি বাস ১৫ বছরের মেয়াদ পূরণ করে ফেলার পরে সেগুলির মালিকেরা নতুন ধরনের এক দরজার বাস রাস্তায় নামাতে সাহস পাচ্ছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, সেগুলিকে বাস সংগঠনের পক্ষ থেকে চলতে দেওয়া হবে না।
উত্তর ২৪ পরগনার আইএনটিটিইউসি পরিচালিত বাস সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অমলেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘এল-২৩৮ রুটের বাসে খুব ভিড় হয়। যাত্রীদের নামা-ওঠা করা এবং বাসকর্মীদের জীবিকা বহাল রাখতে ওই বাসে দু’টি দরজা রাখতেই হবে। বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ওই বাসে দু’টি দরজা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ তিনি জানান, ২০০৯ সালে বাসের কাঠামো নিয়ে যখন সরকার নির্দেশ দিয়েছিল, তখনই বারাসত বাসস্ট্যান্ডের অন্য বাসগুলি এক দরজার বাসে রূপান্তরিত হয়। কারণ, সেই সময়ে সেগুলির ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে ১৫ বছর পার করলেও নতুন এল-২৩৮ বাস দু’দরজারই রাখা হবে বলে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে।