Dengue

২০১৯-কেও কি হারাবে বিপজ্জনক ডেং-২-এর গতি, ঘনাচ্ছে আশঙ্কা

নাইসেড এবং এসটিএমের রিপোর্ট অনুযায়ী স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, চলতি বছরে ডেঙ্গিশুরু হয়েছিল ডেং-৩ স্ট্রেন দিয়ে। এখন সেই জায়গা প্রায় দখলে নিয়ে নিয়েছে ডেং-২।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৪২
Share:

জটিল হচ্ছে রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি। ফাইল চিত্র।

ক্রমেই জটিল হচ্ছে রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি। বিগত দু’বছরের থেকে এ বার অনেকটাই অন্য রকম। চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা, সকলেই জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির দু’টি সেরোটাইপের মারাত্মক রকম ‘খেলা’র কারণে এক জনের দু’বার সংক্রমণের আশঙ্কাও প্রবল। আরও একটি বিশেষ সেরোটাইপের কারণেই এ বারে ডেঙ্গির প্রকোপ এতটা বেশি।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক রিপোর্টে এমনই তথ্য সামনে এসেছে। তাতে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ডেং-২ সেরোটাইপ। চলতি বছরের শুরুতে ডেং-৩-এর কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন। তাতে সংক্রমিতের হার খুব বেশি ছিল না। কিন্তু আচমকাই জায়গা দখল করছে ডেং-২। অত্যন্ত বিপজ্জনক এই সেরোটাইপের কারণে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। গত এক মাসে আচমকাই সংক্রমিতের সংখ্যা লাফিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকায় ডেঙ্গির সেরোটাইপ পরীক্ষা করারসিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এসটিএম) এবং নাইসেডে পরীক্ষা শুরু হয়। তাতেই ডেং-২-এর দাপাদাপি প্রকাশ্যে এসেছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, চলতি মরসুমে ডেঙ্গির দু’রকম সেরোটাইপেরই (ডেং-২, ডেং-৩) একসঙ্গে উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেং-১ এবং ৩ ততটা ভয়াবহ নয়।কিন্তু ডেং-২ এবং ৪ অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে সংক্রমণ যেমন দ্রুত ছড়ায়, তেমনই রোগীর অবস্থা মারাত্মক খারাপ হয়ে মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পায়। এক জন মানুষ একই স্ট্রেনে পর পর দু’বার আক্রান্ত হন না। কিন্তু একটিতে সংক্রমিত হওয়ার পরে অন্য একটি স্ট্রেনে তিনি আক্রান্ত হতেই পারেন।তাতেই রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন,‘‘পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই সেরোটাইপ পরীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। কোন স্ট্রেন কতটাপ্রভাব ফেলছে, তা ওই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বোঝা হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরেই কড়া নজররাখা হচ্ছে।’’

Advertisement

জনস্বাস্থ্য চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯-কে ডেঙ্গির ‘আউটব্রেক বছর’ হিসাবে ধরা হয়। সেই সময়ে দেখা গিয়েছিল, ডেং-২-এর কারণেই এমন অবস্থা। যেখানে আক্রান্ত ও মৃত, দুইয়ের সংখ্যাই অত্যন্ত বেশি ছিল। এ বারেও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। মশাবাহিত এই রোগের সংক্রমণের ধারাবাহিকতা দেখে তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘২০১৯-কে সহজেই পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ২০২২।’’

নাইসেড এবং এসটিএমের রিপোর্ট অনুযায়ী স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, চলতি বছরে ডেঙ্গিশুরু হয়েছিল ডেং-৩ স্ট্রেন দিয়ে। এখন সেই জায়গা প্রায় দখলে নিয়ে নিয়েছে ডেং-২। সূত্রের খবর, রাজ্যে সেপ্টেম্বরে ডেং-১ ছিল ৭ শতাংশ, ডেং-২ ছিল ২০ শতাংশ, ডেং-৩ ছিল ৬১ শতাংশ আরডেং-৪ ছিল ২ শতাংশের মতো। এক মাসের মধ্যে তা অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থাৎ, অক্টোবরের এখনও পর্যন্ত ডেং-১ রয়েছে ৬ শতাংশ, ডেং-২ রয়েছে ৪০ শতাংশ, ডেং-৩ রয়েছে ৫২ শতাংশ আর ডেং-৪ রয়েছে ১ শতাংশের মতো।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এক মাসেই ডেং-২ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। আর সেখানে ডেং-৩ কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। ফলে পরিস্থিতি যে জটিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মেডিসিনের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পালের কথায়, ‘‘ডেং-২ বিপজ্জনক।এক ব্যক্তি দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হলে তাঁর সঙ্কটজনক হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement