অস্বাস্থ্যকর: রুনু বিশ্বাসের বাড়ির অদূরেই আবর্জনায় ভরে রয়েছে বাগজোলা খাল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
বাগজোলা খালপাড় ভরেছে আবর্জনায়। প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট, ডাবের খোলা থেকে মশার বংশবৃদ্ধির যাবতীয় উপাদানই সেখানে মজুত। খালে জলপ্রবাহ থাকলেও ভাসছে আবর্জনার স্তূপ। ঘিঞ্জি এলাকায় ছোট ছোট খোলা নিকাশিনালা। তিনটি জলাশয়ের একটিতে জল নেই। তাতে নিকাশির জল পড়ছে। অন্য জলাশয়টি স্থানীয়দের আবর্জনা ফেলার বড় ভরসা। অথচ আবর্জনা ফেলা আটকাতে অস্থায়ী পুরকর্মীরাও রয়েছেন সেখানে। কিন্তু রাতে কেউ না থাকায় যাবতীয় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন পুরকর্মীদের একটি অংশ। স্থানীয় মাঠে গিয়ে দেখা গেল, পুজোর মণ্ডপ পুরো খোলা হয়নি। তারই মাঝে কৃত্রিম জলাশয়ে বাঁশ এবং অন্য জিনিস ভাসছে। এমনই ছবি বিধাননগর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বাগুইআটির অশ্বিনীনগরের উদয়ন পল্লিতে।
২০১৮ সালে এই ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল। জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন অসংখ্য বাসিন্দা। কার্যত মহামারীর চেহারা নিয়েছিল ওই এলাকা।
প্রশাসন দাবি করেছিল, বছরভর সচেতনতার প্রসার, মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়ে পরিস্থিতি বদলে দেওয়া হবে। কিন্তু বুধবার ভোরে প্রসবের দিন কয়েকের মাথায় ওই এলাকারই বাসিন্দা কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলের ডেঙ্গিতে মৃত্যু ঘুম কাড়ছে বাসিন্দাদের। পুরসভার আশ্বাস মতো ছবি যে বদলায়নি, তা নিম্ন বাগজোলার পাড় বরাবর ওই এলাকা ঘুরেই দেখা গেল।
বিধাননগর পুর প্রশাসনের লোকেরাই স্বীকার করে নিচ্ছেন, গোটা পুর এলাকায় ডেঙ্গি এবং জ্বর মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাতশো ছাড়িয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে কমবেশি ১০ জন আক্রান্ত। জ্বরে আক্রান্ত ১০-১২ জন। তবে স্থানীয়দের দাবি, জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার তেল ছড়ানো, কামান ব্যবহার করা হলেও কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাঁদের দাবি, এলাকায় কাউন্সিলরকে দেখা যায় না। অন্য দিকে, পুরসভাও অভিযোগের আঙুল তুলছেন বাসিন্দাদের দিকে। তাঁদের দাবি, বাড়ির টব, খোলা পাত্র, বালতিতে জল ধরে রাখার প্রবণতাও দেখা গেল।
ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাসবী দত্ত থাকেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি দু’বার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর হয়ে পরিষেবা দেখভাল করেন স্বামী তথা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব শঙ্করনারায়ণ দত্ত। বাসিন্দাদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, আগে ওই পুকুরগুলি ভরাট করে বিক্রির চক্রান্ত হয়েছিল। তাঁরা সে সব আটকেছেন। একটি পুকুরে জল শুকিয়ে গিয়েছে। অন্যটি সংস্কারের জন্য যে যন্ত্রের প্রয়োজন, তা অপরিসর রাস্তা দিয়ে না ঢোকাতে পারায় এত দিন কাজ করা যায়নি। তবে সংস্কারের দ্রুত শুরু করা হবে।
শুধু তাই নয়, বাসিন্দাদের উপরে দোষ চাপিয়ে দায় সারছেন শঙ্কর। তাঁর অভিযোগ, এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করার জন্য পুরসভার দু’টি দল কাজ করে। তা সত্ত্বেও অনেক বাসিন্দারই বাড়িতেই আবর্জনা জমিয়ে রাখা কিংবা যত্রতত্র তা ছুড়ে ফেলার প্রবণতা আটকানো যাচ্ছে না। বাড়িতে জল না জমাতে, কলা বা কচু গাছ কেটে ফেলতে বলেও লাভ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে পুরকর্মীরা বাড়িতে ঢুকতেই পারছেন না বলে দাবি তাঁর।
একই সুর বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় জানান, বাগজোলা খাল কিংবা জলাশয়গুলি নিয়ে পুরসভা চেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁর দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে পুরকর্মীরা কাজ করছেন না এমন অভিযোগ মানা যাচ্ছে না। তবে কাজে গাফিলতি রয়েছে কি না তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে বলে তাঁর ফের আশ্বাস। তিনি জানান, পুরসভার কেন্দ্রীয় দল এলাকায় পাঠানো হবে। তবে তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বাড়িতেই পরিদর্শনে গিয়ে মশার লার্ভা মিলছে। তাই সচেতনতার প্রসার আরও বাড়াতে হবে।’’