প্রতীকী ছবি।
খাতায় কলমে প্লেটলেটের ঘাটতি নেই। তবুও ডেঙ্গি আক্রান্ত সঙ্কটাপন্ন রোগীর প্রয়োজনীয় রক্তের উপাদান জোগাড়ে হয়রানি এড়ানো গেল না।
রাজারহাটের দশদ্রোণের বাসিন্দা শিখা পাড়ুইকে (৪০) সোমবার সন্ধ্যায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রক্তপরীক্ষায় দেখা যায়, রোগীর প্লেটলেট ১৬ হাজার। পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত ছয় ইউনিট প্লেটলেটের জন্য রিকুইজিশন দেন চিকিৎসকেরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, পাড়ায় রক্তদান শিবির মানে শিখার সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়বেই। অভিযোগ, সেই শিখার জন্য রিকুইজিশন সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্টারে জমা দেওয়া হলে প্রথমে প্লেটলেট নেই বলা হয়। এ দিকে প্লেটলেটের পরিবর্তে তৎক্ষণাৎ রোগীর পাড়ার লোকেরা রক্ত দিতে রাজি থাকলেও তা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এর পর রক্তদান শিবিরের সঙ্গে যুক্ত পরিচিতদের ফোনে বিষয়টি জানালে দু’ইউনিট রক্তের উপাদান মেলে।
বাকি প্লেটলেটের জন্য আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান শিখার পরিজনেরা। গভীর রাতেও রক্তদাতা হিসেবে তাঁদের সঙ্গে একদল মহিলা ছিলেন। কিন্তু সেখানে না পেয়ে এনআরএসের দ্বারস্থ হন তাঁরা। এনআরএস সূত্রের খবর, প্লেটলেটের হিসেব কম্পিউটারে নথিভুক্ত হয়নি। এ জন্য প্লেটলেট দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্তব্যরত কর্মীরা। বিষয়টি ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দিলীপ পাণ্ডাকে জানানো হয়। রাত দুটো নাগাদ তাঁর হস্তক্ষেপে বাকি প্লেটলেটের ব্যবস্থা হয়।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেও এই হয়রানি কেন? রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী দীপঙ্কর মিত্র বলেন, ‘‘শিবিরের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তার উপরে সংগৃহীত রক্ত থেকে পুরোপুরি উপাদান তৈরি হচ্ছে না। পরিসংখ্যান ঠিক রাখতে এক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেট সরবরাহ করে অবস্থা সামাল দেওয়া হচ্ছে।’’ রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সদস্য অচিন্ত্য লাহার বক্তব্য, কলকাতার অন্তত একটি ব্লাড ব্যাঙ্কে ২৪ ঘণ্টা রক্তের উপাদান তৈরির সুবিধা থাকা প্রয়োজন।
এনআরএসের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ‘‘প্লেটলেটের হিসেব কম্পিউটারে নথিভুক্ত না হওয়াই ওই রোগীর প্লেটলেট পেতে দেরির কারণ। প্লেটলেটের ঘাটতির জন্য নয়।’’ সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা স্বপন সোরেনের সঙ্গে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
একই বক্তব্য স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, ডেঙ্গির মরসুমে চাহিদা অনুযায়ী জোগানে যে পরিমাণ রক্তদান শিবির দরকার তা হচ্ছে না। এ দিকে প্লেটলেটের আয়ু ৩-৫ দিন। তাই জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা হয়তো সত্যিই রোগীর রক্তের উপাদানের প্রয়োজন কতখানি তা যাচাই করে নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘যে সব এলাকায় ডেঙ্গি নেই প্রয়োজনে সেখান থেকে প্লেটলেট আনানো হচ্ছে। শিবিরে সংগৃহীত রক্ত থেকে যাতে একশো শতাংশ উপাদান তৈরি করা যায় তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার না করে ভ্রান্ত অভিযোগ করা হচ্ছে।’’