রাজভবনের কাছে রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে স্প্রিং পোস্ট দিয়ে তৈরি পথ-বিভাজিকা। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
রাস্তার মাঝ বরাবর বসানো, গোটা কুড়ি স্প্রিং পোস্টের মধ্যে কয়েকটির উপরে উঠে গিয়েছে আস্ত বাস। সামনে বেঁকে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে ব্যস্ত আরও একটি বাসের চাকার নীচে পিষ্ট কয়েকটি কমলা রঙের ফাইবার পোস্ট। দিনের ব্যস্ত সময়ে এমন দৃশ্য শুধু উল্টোডাঙা স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাতেই নয়, দেখা যায় শহরের প্রায় সর্বত্র। সেখানে লেন ভেঙে দাঁড়ানো বেপরোয়া বাসের চাকায় প্রায়ই এ ভাবে পিষ্ট হয় স্প্রিং পোস্টগুলি। শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এমন বেহাল স্প্রিং পোস্টই লেন-ভাঙা গাড়ির দৌরাত্ম্যকে আরও কয়েক গুণ বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। যা স্প্রিং পোস্টের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে লালবাজারের নজরদারিকেও।
বছর কয়েক আগে লালবাজারের অন্তর্তদন্তে শহরে একাধিক দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল লেন-ভাঙা গাড়ির দৌরাত্ম্য। এর পরেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে গাড়ির লেন নির্দিষ্ট করার তোড়জোড় শুরু হয়। বাস-সহ শহরের বিভিন্ন গণপরিবহণের রেষারেষি করে যাত্রী তোলা রুখতে এবং লেন মেনে গাড়ি চালাতে বাধ্য করতেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে সারি সারি ফাইবারের স্প্রিং পোস্ট বসায় লালবাজার। যদিও নজরদারির অভাবে বর্তমানে গেরুয়া রঙা স্প্রিং পোস্টগুলির বেশির ভাগেরই হাল বেহাল। কোথাও পর পর লাগানো স্প্রিং পোস্টের মধ্যে আট-দশটি গোড়া থেকে ভাঙা, কোথাও আবার স্প্রিং পোস্ট ভেঙে রাস্তার সঙ্গে কার্যত মিশে যাওয়ার জোগাড়। এমনকি, এ ভাবে রাস্তার মাঝে ভাঙা স্প্রিং পোস্টের অংশ রয়ে যাওয়ার জেরে ছোট-বড় বাইক দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।
উল্টোডাঙা স্টেশন, এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, এজেসি বসু রোড, ই এম বাইপাস, গড়িয়াহাট রোড-সহ শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় স্প্রিং পোস্টের এমন বেহাল দশা। একই অবস্থা স্ট্র্যান্ড রোডেও। কোথাও গোড়ার অংশটুকু পড়ে রয়েছে, কোথাও সেটুকুও নেই। পুলিশের অবশ্য দাবি, স্প্রিং পোস্টগুলি নষ্ট হলে নির্দিষ্ট গার্ডের তরফে লালবাজারকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া আছে। পোস্ট খারাপ হলে পুনরায় টেন্ডার ডেকে তা ঠিকও করানো হয়। এমনকি, স্প্রিং পোস্ট নষ্ট করলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
অবশিষ্ট: ভাঙা স্প্রিং পোস্টের গোড়া রয়ে গিয়েছে রাস্তায়। শিয়ালদহে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কিন্তু তার পরেও একাধিক রাস্তায় স্প্রিং পোস্টের এমন হাল কেন? উত্তর এড়াচ্ছেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই প্রবণতা রুখতে পুলিশের তরফে সংশ্লিষ্ট গাড়ির বিরুদ্ধে ১৮৪ ধারায় (বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো) মামলাও রুজু করা হয়। কিন্তু তার পরেও এই প্রবণতায় লাগাম টানা যায়নি। এর জন্য অবশ্য চালকদের অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশ।
শহরে দুর্ঘটনা কমাতে একাধিক বার নগরপাল সরব হয়েছেন। এমনকি, সপ্তাহখানেক আগেও পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সূচনায় পথ দুর্ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যু কমাতে আরও সক্রিয় হওয়ার কথা বলেছিলেন নগরপাল বিনীত গোয়েল।বেহাল স্প্রিং পোস্ট নিয়ে লালবাজারের এক পুলিশ কর্তা বলছেন,‘‘নতুন-পুরনো মিলিয়েই শহরের রাস্তায় স্প্রিং পোস্ট রয়েছে। নষ্ট হলে টেন্ডার ডাকা হয়। এমনকি, এক বছরের মধ্যে নষ্ট হলে টেন্ডার পাওয়া সংশ্লিষ্ট সংস্থা নতুন করে আবার তা বসিয়ে দেয়।’’