কথায় অসঙ্গতি মেলায় আটক মৃতার স্বামী। প্রতীকী ছবি।
দু’হাতের শিরা কাটা। গলার নলিও এমন ভাবে কাটা যে, রক্তাক্ত দেহটির ধড় ও মাথা প্রায় আলাদা হয়ে গিয়েছে। চার দিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে পলতা স্টেশনের কাছে জহর কলোনিতে এমন ভাবেই খুন হয়েছেন এক যুবতী।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম অঞ্জনা দেবী (৩৫)। কথায় কিছু অসঙ্গতি মেলায় মৃতার স্বামী অমর লালকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নোয়াপাড়া থানায় নিয়ে গিয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমর বায়ুসেনার কর্মী। ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতেই তিনি কর্মরত। সপ্তাহ দুই আগে পলতার এই ভাড়া বাড়িতে সপরিবার উঠেছিলেন। ওই দম্পতির দুই কন্যা। এক জনের বয়স আট, অন্য জন বছর তিনেকের। শুক্রবার বিকেলে দুই মেয়েকে নিয়ে পলতা এয়ারফোর্স স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে একটি উদ্যানে বেড়াতে যান অমর। সেই সময়ে ঘরে অঞ্জনা একা ছিলেন।
রাত আটটা নাগাদ অমর মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এর কিছু পরেই প্রতিবেশীরা তাঁর চিৎকার ও বাচ্চাদের কান্নাকাটি শুনে বাড়িতে ঢুকে দেখেন, শোয়ার ঘরে বিছানার উপরে পড়ে আছে অঞ্জনার দেহ। দু’হাতের কব্জির কাছে শিরা কাটা। ধারালো অস্ত্রের কোপে নলি কেটে অনেকটা ফাঁক হয়ে বিছানার পাশে মাথা ঝুলছে। এলাকার লোকজনই পুলিশে খবর দেন। যে বাড়িতে অমরেরা ভাড়া থাকেন তার মালিকও প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘আপাতভাবে ভদ্র নির্ঝঞ্ঝাট পরিবার। কী ভাবে এমন ঘটল বুঝতে পারছি না। যে এমন নৃশংস ভাবে খুন করল, সে যদি অপরিচিতই হত, তবে নিশ্চয়ই ওই মহিলা চেঁচামেচি করতেন। আমরা এত কাছে থেকেও কিছু শুনতে পেলাম না!’’
তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে দম্পতির বড় মেয়ে জানায়, বিকেলে দুই বোনকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়েও ফের ফিরে আসেন তাদের বাবা। কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে তাদের উদ্যানে নিয়ে যান। কেন অমর ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। অমর নিজেকে বায়ুসেনার সার্জেন্ট পদাধিকারী বলে পরিচয় দেন। তাঁর দাবি, ‘‘মেয়েদের নিয়ে ফিরে দেখি, শোয়ার ঘরের দরজা খোলা। বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে স্ত্রী।’’ এই ঘটনার পিছনে পরিচিত কেউ আছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারী থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।
উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মলয় ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ক’দিন আগে ঘরের মধ্যে এক বৃদ্ধাকে গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রেও পরিচিত ব্যক্তিই খুন করেছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছিল।’’ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (উত্তর) শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে খুন হয়েছে, এটা স্পষ্ট। তবে কারা এবং কেন এমন করল, তা তদন্তসাপেক্ষ। নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’