সইফ খান।
ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া-মিহিজাম জাতীয় সড়ক লাগোয়া জঙ্গল থেকে এক যুবকের গলা কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সইফ খান (৩৮)। বাড়ি কলকাতার রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে। বুধবার স্থানীয় সাখিপাথর লাগোয়া গ্রাম এলাকা থেকে ওই যুবকের দেহ উদ্ধার করে ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, এটি খুনের ঘটনা। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মৃতের মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়নি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক পেশায় প্রোমোটার ছিলেন।
বুধবার স্থানীয় সূত্রে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, জঙ্গলে পড়ে রয়েছে একটি মৃতদেহ। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধারের পরে সইফের পকেট থেকে একটি স্কুটারের চাবির রিং ও একটি হাতঘড়ি মেলে। ওই চাবির রিং-এ স্কুটারের নম্বর লেখা ছিল। সেই সূত্রে প্রথমে কলকাতায় ওই স্কুটারের শোরুমের সন্ধান পায় পুলিশ। সেখান থেকে জোগাড় হয় পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর। খবর পেয়ে সে দিনই ঝাড়খণ্ডে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন মৃতের পরিজনেরা। ময়না-তদন্তের পরে বৃহস্পতিবার সকালে দেহ নিয়ে কলকাতায় ফেরেন তাঁরা। এ দিন সকালে সইফের শেষকৃত্য হয়।
দাদার মৃত্যুর খবর পেয়েই মিহিজামে ছুটে গিয়েছিলেন মহম্মদ ইমরান খান। পুলিশকে তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ স্কুটার নিয়ে বেরিয়েছিলেন সইফ। আর ফেরেননি। তবে স্কুটারটি রেখে গিয়েছিলেন তাঁদেরই আর একটি বাড়ির কাছে। তাঁকে ফোন করলেও মোবাইল বন্ধ ছিল। জামতাড়া জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে এই খুন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিন রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে মৃতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পুরো পরিবার শোকাচ্ছন্ন। মাস আটেক আগেই বিয়ে হয়েছিল সইফের। তাঁর স্ত্রী সায়েরা খান কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। মৃতের দাদা কায়েশ খান মুম্বইয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বুধবার রাতেই উড়ানে কলকাতায় আসেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাই পেশায় প্রোমোটার হলেও কারও সঙ্গে ঝামেলা ছিল না। ঠান্ডা মাথার ছেলে ছিল। যে ভাবে ওর গলা কাটা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার যে, এটা খুন।’’ তবে কে বা কারা সইফকে মারতে পারে, সে বিষয়ে কিছুই আঁচ করতে পারছে না মৃতের পরিবার। কায়েশের কথায়, ‘‘সইফ ছোটখাটো প্রোমোটার ছিল। এলাকার বাইরে কোথাও প্রোমোটিং করত না। কারও সঙ্গে ঝামেলা বা ধার-দেনাও ছিল বলে জানি না।’’ মৃতের পরিবারের দাবি, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
মৃতের পরিবারের সদস্যেরা জানান, সইফ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রথমে স্কুটার নিয়ে কাছেই ওয়েলেসলি পার্ক সেকেন্ড লেনের পুরনো বাড়িতে যান। তাঁর পিসির ছেলে আফরোজ খান সেখানে থাকেন। আফরোজ বলেন, ‘‘এখানে আসার আধ ঘণ্টা পরে ওর একটা ফোন আসে। তার পরেই ভাই (সইফ) বাড়ি ফিরে গিয়ে স্কুটার নিয়ে বেরোয়।’’ তবে তিনি কোথায় যাচ্ছেন, পরিবারের কাউকেই তা জানাননি সইফ। কায়েশ বলেন, ‘‘রাত ৮টার পর থেকে ওর ফোন বন্ধ ছিল। সারা রাত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।’’
সইফের পরিজনেরা জানান, তিনি ফিরে আসবেন ধরে নিয়েই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে ওয়েলেসলি পার্ক সেকেন্ড লেনে পুরনো বাড়ির কাছে সইফ স্কুটারটি রেখে যান। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে স্কুটারটি দেখা যায়। ওই স্কুটারের চাবির নম্বরের সূত্রেই মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ।