COVID-19

ঘোর দুশ্চিন্তা, কোভিড ও ভোটই কি ঘুম নিল হরি

মধ্য তিরিশের যুবক। আমেরিকায় এক বান্ধবীর সঙ্গে রোজ রাতে নিয়ম করে চ্যাটে বসতেই হয় তাঁকে। মহিলাটিরও দুপুরে কথা বলার সুবিধা। তাই এক জনের রাত, আর এক জনের দুপুর মিশে যায়।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১ ০৭:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র

মধ্য তিরিশের যুবক। আমেরিকায় এক বান্ধবীর সঙ্গে রোজ রাতে নিয়ম করে চ্যাটে বসতেই হয় তাঁকে। মহিলাটিরও দুপুরে কথা বলার সুবিধা। তাই এক জনের রাত, আর এক জনের দুপুর মিশে যায়। কথা শেষ হতে আকছার কলকাতায় কাক ডাকা শুরু। পরের দিন প্রায়ই অফিস চৌপাট! চাকরি যায়-যায়! রাত জেগে ক্রমশ ‘বডিক্লক’ পাল্টে যাওয়া তরুণ অগত্যা ডাক্তারবাবুর শরণ নিয়েছেন।

Advertisement

করোনাকালে শহরের এক সদ্য তরুণীর অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তা মেয়েকে নিয়ে। অনেক রাত পর্যন্ত কন্যাটি নেটে দেশের দশের নানা সমস্যার সমাধান করে থাকেন, এটুকু তাঁদের জানাই ছিল। কিন্তু অতিমারি-দিনে সেই জাগ্রত বিভাবরীর মেয়াদ বেড়েছে ভোর পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। শুধু নেটে আড্ডা নয়, নানা কিসিমের ওয়েব সিরিজ় না দেখলে রাতটাই যেন পানসে। মেয়ের পড়াশোনায়, কাজকর্মে এই বিনিদ্র রজনী যাপনের ফল ভাল হচ্ছে না বলে বড়রা ডাক্তারবাবুর দ্বারস্থ।

‘‘ঘুম ছুটে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় হয়তো কমবয়সিদেরই ডাক্তারের কাছে বেশি নিয়ে আসা হয়, কিন্তু সমস্যাটা আরও ব্যাপক। নানা বয়সের মানুষই এর ফল টের পাচ্ছেন। কোভিডে জীবনযাত্রা টালমাটাল হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। উৎকণ্ঠাতেও অনেকের ঘুম মাটি। ভোটের সময়েও রাত জাগার প্রবণতা কিছুটা বাড়ছে।’’— বলছিলেন মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

আর এক মনোরোগ চিকিৎসক তথাগত চট্টোপাধ্যায়ের মতেও, “ডাক্তারির বিভিন্ন নামী আন্তর্জাতিক জার্নাল ঘেঁটে বোঝা যায়, শতকরা ৩০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ঘুমের অভাবে ভোগেন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কিন্তু ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই দরকার। বরাদ্দ ঘুমের ভাগে কম পড়তে থাকলে নানা সমস্যা দেখা দেবে।’’ আবার নেট-বিলাসীদের বাইরেও অনেকের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম তত সুলভ নয়। দিনে, রাতে বাইরে-ঘরে কাজে জেরবার বহু শ্রমজীবী মহিলা কোনওমতে বরাদ্দ ঘুমটুকু বাসে, ট্রেনে যাতায়াতের ফাঁকেই আদায় করার চেষ্টা করেন। সবার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের অধিকারের দাবিতেই মহাবিষুবের আগের শুক্রবার দিনটি বিশ্ব ঘুম দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। আমেরিকার ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি এই নিয়ে উদ্যোগী হলেও ঘুমের গুরুত্ব ক্রমশ সকলেই বুঝছেন। তথাগত বলছিলেন, “দীর্ঘদিন ঘুম না হওয়া বা কম ঘুমের খেসারত নানা ভাবে দিতে হয়। ভুলে যাওয়া, মনঃসংযোগের অভাব থেকে মোটা হওয়া, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা, নানা মানসিক অসুখ, যৌন ইচ্ছেয় খামতি— কত কিছু হয়।” রিমার ব্যাখ্যা, “ঘুম অনেকটা শরীরের ব্যাটারিতে চার্জ ভরা! ঝরঝরে শরীরে চটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত কাজ করায় সুবিধা।’’

চিকিৎসকদের মতে, শরীর সুস্থ রাখা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে শুতে যাওয়া— ঘুমের জন্য অনেক কিছুই করণীয়। আবার বাড়তি ঘুমের ওষুধ নির্ভরতাও খারাপ। স্মার্টফোন-নির্ভর জীবনে ঘুমের রাস্তা দিন দিন জটিল হচ্ছে। ডাক্তারদের নিদান, ‘জাগিবার গাঢ় বেদনার অবিরাম ভার’ বহিতেও ঘুমের দরকার প্রবল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement