—প্রতীকী ছবি।
সকালের দিকে মাঝেমধ্যে রোদ উঠছিল কিছু ক্ষণের জন্য। কিন্তু খানিক পরেই আকাশ ছেয়ে যাচ্ছিল কালো মেঘে, নামছিল বৃষ্টি। বিকেলের দিকে সেই বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যায়। বইতে থাকে জোরালো বাতাসও। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আছড়ে পড়ার আগের দিন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এমনই ছিল কলকাতার চিত্র। আজ, বুধবার সকালে ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভাগে ঢোকার কথা ইয়াসের। ঝড়ের অভিমুখ কলকাতার দিকে না-থাকলেও ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না কলকাতা পুলিশ। সোমবারই শহরে পৌঁছেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দশটি দল ও সেনাবাহিনীর ন’টি কলাম।
পুলিশ জানিয়েছে, শহরের জীর্ণ বাড়িগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় বাড়িতে জল ঢুকে বিপত্তি ঘটতে পারে, সেখানকার বাসিন্দাদেরও অন্যত্র সরানো হচ্ছে। এ দিন বিকেল পর্যন্ত শহরের ৪১টি থানা এলাকার প্রায় ২৩০০ বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। এ ছাড়া, আরও কয়েক হাজার বাসিন্দা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গিয়েছেন বলে খবর। ফুটপাতবাসীদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এর জন্য শহরে ১১২টি আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছে। মূলত বন্ধ থাকা স্কুল ও কলেজগুলিকেই এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঝড়ের মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে ‘ইউনিফায়েড কমান্ড’ তৈরি হয়েছে লালবাজারে। এ দিন সেই কন্ট্রোল রুমে থাকা সেনা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী-সহ প্রতিটি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। শহরের প্রতিটি থানা ও ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি এবং এসি-রা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ঝড়ের সময়ে পুলিশকর্মীদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছেন সৌমেনবাবু। গাছ ভেঙে পড়লে বা তার ছিঁড়ে গেলে সংশ্লিষ্ট দফতরে খবর দিতে বলা হয়েছে প্রথমে। আমপানের পরে পুলিশই প্রথম ঝুঁকি নিয়ে গাছ কাটার কাজে হাত দিয়েছিল।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ঝড়ের গতিবেগ কত হবে, তা নিয়ে ধন্দ থাকলেও ওই সময়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে। আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে জানিয়ে দেবে লালবাজার। এ দিনের বৈঠকে কমিশনার বার বার এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন বলে পুলিশের এক কর্তা জানান।
ঝড়ের মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর ন’টি কলাম ইতিমধ্যেই শহরে পৌঁছেছে। প্রতি কলামে থাকছেন ৬০ জন সদস্য। আজ কলকাতা পুলিশের ন’টি ডিভিশনে প্রয়োজন অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে নামানো হবে। তবে কোথায়, কত সংখ্যায়, তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, রাস্তাঘাট চেনা থাকলে ঝড়বৃষ্টি-পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজে সুবিধা হবে ভেবে সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা এ দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
পুলিশকর্মীদের মতে, গত বারের পরিস্থিতি থেকে সকলেই শিক্ষা নিয়েছেন। তাই এ বার ঝড়ের পরে শহরবাসীকে যাতে বেশি রকম ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতেই গত চার-পাঁচ দিন ধরে কমিশনার দফায় দফায় বৈঠক করে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আজকের পরেই বোঝা যাবে সেই প্রস্তুতিতে কোনও খামতি ছিল কি না।