প্রতীকী ছবি।
অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এ বার অনলাইনেই এক ব্যক্তির স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজ়িট) ভাঙিয়ে টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠল। কিন্তু থানা-পুলিশ করেও সুরাহা মেলেনি বলে দাবি অভিযোগকারীর।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর একষট্টির ওই অভিযোগকারীর নাম নির্মলকুমার সরকার। নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা নির্মলবাবুর স্ত্রী এবং দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছেন। বিএসএনএল-এর কর্মী নির্মলবাবু ২০২০ সালে চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন। তার সূত্রেই পাওয়া সাত লক্ষ টাকা তিনি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত হিসাবে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
নির্মলবাবুর দাবি, গত ৫ অক্টোবর একটি অনলাইন পেমেন্ট সংস্থার নাম করে ফোন আসে তাঁর কাছে। বলা হয়, আগামী দিনে সবই অনলাইন পেমেন্ট-নির্ভর হবে, তাই সংস্থায় নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে রাখলে সুবিধা হবে তাঁরই। সেই মতো গুগলে গিয়ে তাঁকে ইংরেজিতে ‘কুইক সাপোর্ট’ টাইপ করতে বলা হয় এবং তাঁর ফোনে এই নামের একটি অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে নেওয়া হয়। এর পরে তাঁকে বলা হয়, নিজের মোবাইল থেকে তিনি যে ভাবে ফোন রিচার্জ করেন, সে ভাবেই ১০ টাকার রিচার্জ করতে। নির্মলবাবুর অভিযোগ, তা করার পরেই প্রথম দফায় তাঁর অ্যাকাউন্টে থাকা ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বেরিয়ে যায়। তার পরে আরও ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার মেসেজ পান তিনি। দ্রুত ব্যাঙ্কে ছোটেন প্রৌঢ়।
নির্মলবাবুর দাবি, ব্যাঙ্ক তাঁকে জানায়, তাঁর মোবাইলটি ‘ক্লোন’ করে সেভিংস অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অনলাইনেই স্থায়ী আমানতটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখান থেকেই ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারকেরা। নির্মলবাবুর কথায়, ‘‘মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ফিক্সড ডিপোজ়িটের কাগজপত্র আমার বাড়িতে। বুঝতে পারলাম না সে সব ছাড়া, আমার সই না নিয়ে কী ভাবে টাকা তোলা সম্ভব?’’ তাঁর অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে ব্যারাকপুর থেকে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে একাধিক বার ছুটেও এই প্রতারণার সুরাহা হয়নি। অবশেষে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। যে ব্যাঙ্কে অভিযোগকারীর অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেখানকার এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘অনলাইনে ডিপোজ়িট ভাঙার অনুরোধ উপভোক্তার তরফ থেকে পাঠানো হলে সেটা মানা হয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ করায় বাকি টাকাটা বাঁচানো গিয়েছে।’’
কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখায় যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লালবাজার সাইবার শাখার এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘ফোনটিকে ক্লোন করে নেওয়ার পরে অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত সমস্ত নথিপত্র প্রতারকেরা খুঁটিয়ে দেখেছে। সেই সময়েই ফিক্সড ডিপোজ়িটের কাগজপত্র সম্ভবত তাদের হাতে চলে গিয়েছিল। তবে গোটা বিষয়টা স্পষ্ট করতে তদন্ত করা হচ্ছে।’’