প্রতীকী ছবি।
ফের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি ঘটনার নিষ্পত্তি না হতেই ফের একই হস্টেলে এমন অভিযোগে বিড়ম্বনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ বার কর্তৃপক্ষের উপরে ভরসা না রেখে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অভিযোগ করেন আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই নিগৃহীত পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কড়া চিঠি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইউজিসি।
গত মাসেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ ল কলেজ হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া পড়ুয়াদের একাংশ অভিযোগ তুলেছিলেন, কয়েক মাস ধরে ওই হস্টেলের কয়েক জন আবাসিক ও উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের একাংশ তাঁদের উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। বহুবার কাকুতি মিনতি করার পরেও র্যাগিং না থামায় তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন কর্তৃপক্ষের কাছে। তার ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দ্রুত তদন্ত শেষ করা ও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরের সামনে টানা দু’দিন অবস্থান করেছিলেন পড়ুয়ারা। সেই ঘটনার নিষ্পত্তি না হতেই ফের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল।
নিগৃহীত ছাত্রের মা সোমবার বলেন, ‘‘শুধু র্যাগিং নয়, কার্যত অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমার ছেলের মাথা, মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে। এমনকী, দীর্ঘ ক্ষণ ঘরে আটকেও রাখে ওকে। হস্টেল থেকে কোনও ভাবে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছে ছেলে।’’ তিনিই জানান, গত ৭ ডিসেম্বরে নিউ ল কলেজ হস্টেলে ওই পড়ুয়ার উপরে কার্যত তাণ্ডব চালানো হয়। তাঁর দাবি, কয়েক মাস ধরে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের এক দল পড়ুয়া এই অত্যাচার চালিয়ে আসছে। ক্রমেই অত্যাচার বাড়ছে। কিন্তু ওই দিন তা মাত্রা ছাড়ায় বলে জানান ওই ছাত্রের মা। সোমবারও ওই পড়ুয়ার মাথায় স্ক্যান করাতে হয়েছে। ফলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনার পরেই ওই ছাত্র ইউজিসি-তে অভিযোগ জানান। গত রবিবার কর্তৃপক্ষের কাছে ইউজিসি-র নির্দেশিকা এসে পৌঁছয়। তার পরেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, ওই চিঠিতে ইউজিসি জানিয়েছে, দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করতে হবে। তার পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং গর্হিত অপরাধ। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলাও শুরু হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযুক্তকে বহিষ্কার করারও নিদান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করার পরে এক অভিযোগকারী নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন। বাকিরা অবশ্য অনড়ই ছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন। এ ক্ষেত্রেও সে রকম অভিযোগ করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একাংশ।
কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার যে এই বিষয়টির উপরে নজর রাখবে, সেই ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, সম্প্রতি বহু বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি র্যাগিং বিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সেখানে অভিযোগ না জানিয়ে কেন সরাসরি ইউজিসি-তে অভিযোগ করলেন ওই ছাত্র? তা হলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে ভরসা নেই তাঁর? এর সরাসরি কোনও উত্তর দেননি ওই ছাত্রের মা। তিনি শুধু দাবি করেছেন, তাঁরা কোথাও কোনও অভিযোগ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘ইউজিসির-র তরফ থেকে যে চিঠি এসেছে, সেটা র্যাগিং বিরোধী কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে দেখা হবে। নিয়ম মেনে পদক্ষেপও করা হবে।’’