Drinking Water Crisis

গরমের শুরুতেই ফের শহরে বাড়ছে পানীয় জলের সঙ্কট

পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে শহরে ৭২টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। আরও ১৫টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হওয়ার পথে। তবু তা গরমকালের প্রবল চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শহরে পরিস্রুত পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তৈরি হয়েছে একের পর এক বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও শহরে পানীয় জলের চাহিদা মিটছে না। গরম পড়তে শুরু করতে না করতেই শহরের সংযুক্ত এলাকায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। টালিগঞ্জ, কসবা, বাঁশদ্রোণী, যাদবপুর এলাকার পুরপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, তাঁদের ওয়ার্ডে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জল মিলছে না।

Advertisement

পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে শহরে ৭২টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। আরও ১৫টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হওয়ার পথে। তবু তা গরমকালের প্রবল চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার বাজেট অধিবেশনের বিদায়ী ভাষণে মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্বীকার করেছিলেন যে, এখনও টালিগঞ্জ, কসবা, যাদবপুরের একাংশে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। সমস্ত গভীর নলকূপ সরিয়ে পর্যাপ্ত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার কথা বলেন তিনি। পুরসভার সংযুক্ত এলাকার পুরপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগই জানান, গরমের সময়ে তাঁদের ওয়ার্ডে পানীয় জলের চাহিদা বেড়ে যায়। পুরসভার পরিস্রুত জল না পাওয়ায় অনেককেই তখন জল কিনে খেতে হয়। ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেবের কথায়, ‘‘আমার ওয়ার্ডে সাত জায়গায় গভীর নলকূপ রয়েছে। বাবুবাগান, এ পি চ্যাটার্জি রোড, নিউল্যান্ড ঝিল রোড-সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গরমে পানীয় জলের সঙ্কটে ভোগেন। এখানে একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের কাজ মাস ছয়েক আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জলাধার তৈরি হলেও পানীয় জল না আসায় মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।’’

১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমার বরো এলাকার অধিকাংশ ওয়ার্ডে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানীয় জল তোলা হয়। গরমের সময়ে পাম্পের মাধ্যমে জল তোলার কারণে মাটির নীচের জলস্তর আরও নীচে নেমে যায়। ফলে অনেক সময়ে জল তুলতে গিয়ে মোটর বিকল হয়ে পড়ে।’’ যাদবপুর বিধানসভা এলাকার ১১ নম্বর বরোর সমস্ত ওয়ার্ডেই গরমকালে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয়। সে কথা স্বীকার করে তারকেশ্বর বলেন, ‘‘বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থাকলেও প্রয়োজনীয় জলের উৎপাদন না হওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা।’’

Advertisement

পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, ১১ নম্বর বরো এলাকার ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের পার্ক টেরেস, সাউথ পার্ক, সাউথ রোড, অ্যাভিনিউ সাউথ, শান্তিপথ, মডার্ন পার্ক থেকে শুরু করে ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর, ইস্টার্ন পার্ক, ব্যাঙ্কপ্লট, সুইটল্যান্ডের মতো এলাকায় গরমের প্রথমেই পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়। ১১১ থেকে ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৭০ শতাংশ পানীয় জল গভীর নলকূপের মাধ্যমে তোলা হয়। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল তুলতে গিয়ে অনেক সময়ে পাম্পের মোটর বিকল হয়ে সমস্যা বাড়ে। ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি গোপাল রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ২০১৫ সালে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন চালু হয়। প্রথম দিকে তাতে যে পরিমাণ জল পাওয়া যেত, এখন তার পরিমাণ অনেক কমেছে।’’ বাইপাস সংলগ্ন ১০৬, ১০৭, ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডেও গরম পড়তে না পড়তেই পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব শুরু হয়ে গিয়েছে। ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি লিপিকা মান্নার কথায়, ‘‘আমার ওয়ার্ডে পূর্বশ্রীপল্লি, প্রান্তিকপল্লি, রাজডাঙা নতুন বাজার, নস্করহাট ইত্যাদি এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল মেলে না। অনেকেই গরমের সময়ে জল কিনে খান।’’

পুর জল সরবরাহ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বর্তমানে শহরের পাঁচটি জল প্রকল্প থেকে ৫২০ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপাদন হয়। পরিস্রুত জলের উৎপাদন বাড়াতে ধাপায় ২০ মিলিয়ন ও গড়িয়ায় ১০ মিলিয়ন গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দু’টি জল প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্প দু’টির কাজ শেষ হলে সংযুক্ত এলাকায় জলের সমস্যা মিটবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement