গত কয়েক মাসে বাহিনীতে করোনার দাপট ছিল নিম্নমুখী। ফাইল ছবি
ব্যবধান ১৫ দিনের। তাতেই করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা শূন্য থেকে পৌঁছে গিয়েছে ১৯-এ। এই পরিসংখ্যান কলকাতা পুলিশ বাহিনীতে। পরিস্থিতি এমন যে, দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। প্রথম তিনটি ঢেউয়ের সময়ে অতিমারি যে ‘খেল’ দেখিয়েছিল, তাতে বাহিনীর কাজ করা নিয়েই ঘোর জটিলতা তৈরি হয়েছিল। ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় আশঙ্কা দানা বাঁধছে, এখনই সতর্ক না হলে আবার অতীতের পুনরাবৃত্তি হবে না তো?
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাসে বাহিনীতে করোনার দাপট ছিল নিম্নমুখী। আক্রান্তের সংখ্যা কমতে কমতে গত মার্চের মাঝামাঝি তা নেমে গিয়েছিল শূন্যে। কিন্তু ছবিটা বদলাতে শুরু করে জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার পর্যন্ত বাহিনীতে মোট সংক্রমিত ১৯। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনের বাড়িতে চিকিৎসা চললেও দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিক থেকে শুরু করে অধস্তন কর্মীরাও আছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে শীঘ্রই বাহিনীর জন্য ফের কোয়রান্টিন কেন্দ্র চালু করা হবে বলে কলকাতা পুলিশের ওয়েলফেয়ার সেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তার ভাঁজ পুলিশকর্তাদের কপালেও। সংক্রমণ ঠেকাতে লালবাজারের তরফে নতুন কোনও নির্দেশ এখনও দেওয়া না হলেও থানাগুলি ইতিমধ্যেই নিজেদের মতো করে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে থানার সামনে ম্যারাপ বেঁধে কাজ করার ভাবনাও ঘুরপাক খাচ্ছে কোথাও কোথাও। এ ছাড়া, বাজার এলাকায় চলছে মাস্ক বিলি। তবে প্রশাসনের তরফে এখনও নতুন করে নির্দেশ না আসায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে আরও কী কী করা যায়, তা নিয়ে দ্বিধায় থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের একাংশ। ইএসডি ডিভিশনের অন্তর্গত একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বললেন, ‘‘পুরনো নির্দেশ মতো যা যা করা যায়, আমরা করছি। অপেক্ষায় আছি, নতুন কোনও নির্দেশিকা আসে কি না। তা হলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
তবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন, যেখানে কলকাতাতেই দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই, সেখানে কেন থানাগুলি কড়া ব্যবস্থার কথা ভাবছে না? গত জানুয়ারিতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে রেহাই পাননি বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তা থেকে শুরু করে অধস্তন কর্মীদের বড় অংশ। ভবানীপুর, একবালপুর, গল্ফ গ্রিন, কসবা-সহ একাধিক থানার পরিস্থিতি এমন হয় যে, পুলিশের দৈনন্দিন কাজ চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে। কোনও থানায় ২৫ জন, কোথাও ১৫, আবার কোনও থানায় ১০-১২ জন পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল হাজারেরও বেশি। বাধ্য হয়ে থানায় সাধারণ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার পথে হাঁটতে হয়েছিল পুলিশকে।
আবার সেই ছবি ফিরবে না তো? আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। শহরের একটি থানার এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘আমাদেরও বয়স হয়েছে। চাকরিজীবন প্রায় শেষের পথে। এই বয়সে আক্রান্ত হলে ফের সামলে উঠতে পারব কি না, তা নিয়ে একটু-আধটু আতঙ্ক তো থাকেই।’’ যদিও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলছেন, ‘‘বাহিনীতে নতুন করে কয়েক জন সংক্রমিত হয়েছেন। তবে আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। সকলকে বলা হয়েছে কোভিড-বিধি মেনে, সতর্ক থেকে কাজ করতে।’’