ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ দমদমে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভায় খোদ তৃণমূলেরই কাউন্সিলর থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পারিষদদের একাংশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ জানিয়ে বৃহস্পতিবার বোর্ড-মিটিং বয়কট করলেন।
তাঁদের অভিযোগ, দমদম বিধানসভা এলাকায় উন্নয়নের কোনও কাজ করা যাচ্ছে না। সমস্যার কথা বার বার জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না।অথচ, পুরসভার অন্য অংশে কাজ হচ্ছে। তাই তাঁরা ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণ ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন।
পুরসভার যে অংশের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, রাত পর্যন্ত তাঁরা কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। পুর চেয়ারম্যানেরও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এই ঘটনায় আলোড়ন পড়েছে দমদমে। পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে কাউন্সিলরদের বক্তব্যের পর্ব শুরু হতে প্রথমেই বলতে চান বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রতিনিধি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি পরিষেবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুলতে থাকেন। সে সময়ে কিছুটা হট্টগোল হয়। এর পরে কার্যত একই সুরে একাধিক কাউন্সিলর পরিষেবা নিয়ে বঞ্চনা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। শুরু হয় হইচই। এর পরেই তিন জন চেয়ারম্যান পারিষদ ও দু’জন নির্দল-সহ মোট ১৭ জন কাউন্সিলর বৈঠক বয়কট করে বেরিয়ে যান। ঘটনাচক্রে তাঁরা সকলেই দমদম বিধানসভা এলাকার পুর প্রতিনিধি এবং ব্রাত্য বসুর অনুগামী বলে এলাকায় পরিচিত।
দক্ষিণ দমদমের (দমদম বিধানসভা) টাউন তৃণমূল সভাপতি তথা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজু সেনশর্মার অভিযোগ, পুরসভার দমদম বিধানসভা অংশে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে মানুষকে। অথচ, পুরসভার অন্য অংশে কাজ হচ্ছে। পুর কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়েও লাভ না হওয়ায় কাউন্সিলরেরা বৈঠক বয়কট করেছেন। এ বিষয়ে দলীয় নেতৃত্বকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে।
শুধু কাউন্সিলরেরাই নন, চেয়ারম্যান পারিষদদের একটি অংশও এ নিয়ে সরব। চেয়ারম্যান পারিষদ (জল, জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পরিবেশ) মুনমুন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কয়েকটি দফতরের দায়িত্ব মিললেও কোন কোন কাজ তাঁর আওতায়, সেটা স্পষ্ট নয়। এর জেরে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের একাংশের অভিযোগ, সমস্ত ক্ষমতা যেন কয়েক জনের কাছে কুক্ষিগত হয়ে আছে।
ওই বৈঠকে শেষ পর্যন্ত থাকা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্সিলরদের একাংশ জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে কাজ শুরু করেছে নতুন পুর বোর্ড। কার কী দায়িত্ব, সেটা স্পষ্ট করেই বলে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই কাজ করা হচ্ছে। যে সব অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়। পূর্ব-পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি দমদমের বিধায়ক তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলা হবে। এ প্রসঙ্গে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
যদিও এই ঘটনা ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সরগরম। এমনিতেই দক্ষিণ দমদমে শাসকদলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ দিনের ঘটনা সেই দ্বন্দ্বকেই প্রকাশ্যে এনে আরও প্রকট করে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।