খাঁ-খাঁ: প্রায় রোগীশূন্য বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার। সেখানেই সাঁটানো নোটিস। ছবি সুমন বল্লভ
কোভিড পরিস্থিতিতে অন্য রোগের চিকিৎসা পেতে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় যখন উপচে পড়ছে, নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের, তখন কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল পুরো উল্টো চিত্র। ওই হাসপাতালে নন-কোভিড রোগের চিকিৎসা হলেও আউটডোর থেকে ইমার্জেন্সি— কোথাওই রোগীর তেমন ভিড় নেই। কেন এমন উল্টো চিত্র? ভুক্তভোগীদের অনেকেরই অভিযোগ, সাগর দত্তে করোনার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে আউটডোরে চিকিৎসকের অভাব লেগেই রয়েছে। তা ছাড়া, ইমার্জেন্সি থেকেও বার বার রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ওই হাসপাতালের উপরে আস্থা হারিয়েছেন অনেকেই।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ ওই হাসপাতালের গিয়ে দেখা গেল, আউটডোর প্রায় ফাঁকা। বাইরে এ দিক-ও দিক ঘুরতে দেখা গেল দুই যুবককে। মিথিলেশ পটেল ও দীপক শর্মা নামে ওই দু’জনের অভিযোগ, তাঁরা আউটডোরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে কোনও চিকিৎসক নেই বলে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইমার্জেন্সিতে। ইমার্জেন্সি তাঁদের আবার পাঠায় আউটডোরে। ফের আউটডোরে ফিরে এসে তাঁরা জানতে পারেন, ২টো বেজে গিয়েছে। আর কোনও চিকিৎসককেই পাওয়া যাবে না।
ওই যুবকেরা জানান, বাড়ির কাছেই এত বড় একটি হাসপাতাল। তাই তাঁরা ভেবেছিলেন, সেখানেই ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন। মিথিলেশ এবং দীপকের প্রশ্ন, সাধারণ একটি পরীক্ষাও হবে না এত বড় হাসপাতালে?
আরও পড়ুন: ‘একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, আমরা কি চাকর!’, রাজ্যপালকে পাল্টা নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর
শুধু দীপক বা মিথিলেশই নন, স্থানীয় বাসিন্দা আরও অনেকেরই অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে সাগর দত্ত হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসার পরিষেবাও ঠিক মতো মিলছে না। তাঁদের দাবি, ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়াটাই এখন দস্তুর। অনেকেরই আবার বক্তব্য, ওই হাসপাতালে যে কোভিড বাদে অন্য রোগেরও চিকিৎসা হওয়ার কথা, সেটাই তাঁরা জানেন না।
সাগর দত্তে কোভিড বাদে অন্য রোগের চিকিৎসা হয় কি হয় না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি যে কেন ছড়াচ্ছে, তা বোঝা গেল আউটডোরের দরজায় টাঙানো একটি নোটিস দেখে। সাদা পাতায় লেখা সেই নোটিস বলছে, ‘সরকারি আদেশ অনুসারে আউটডোর ও ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হল’। পাশেই অবশ্য টাঙানো আরও একটি কাগজ। আউটডোরের বিভিন্ন বিভাগে কোন ডাক্তার সপ্তাহে কত দিন আসবেন, সেই তালিকা রয়েছে তাতে। যে মুষ্টিমেয় কয়েক জন আউটডোরে চিকিৎসা করাতে আসছেন, তাঁরা পরস্পর-বিরোধী দু’রকম নোটিস দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খোলাই আছে আউটডোর। তবে সেখানে এখন চিকিৎসকের সংখ্যা বেশ কম। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, আউটডোরের হাল যেখানে এমন, সেখানে গিয়েও কি কোনও লাভ আছে?
হাসপাতালের সুপার পলাশ দাস অবশ্য দাবি করেছেন, সেখানে কোভিড বাদে অন্য রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘নন-কোভিড রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না, বলব না। ব্যবস্থা আছে, কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম থাকায় আমরা সব কাজ করতে পারছি না। কিছু রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন, কিন্তু নতুন করে ভর্তি নেওয়ার মতো ব্যবস্থা করে উঠতে পারছি না। কর্তৃপক্ষের কাছে লোক চেয়েছি। ইমার্জেন্সিতে আসা প্রত্যেক রোগীকেই দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।’’
তা হলে আউটডোরের দরজায় আউটডোর ও ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নোটিস টাঙানো আছে কেন? পলাশবাবুর জবাব, ‘‘ওটা পুরনো নোটিস। মাস দুয়েক আগে সাগর দত্ত যখন কোভিড হাসপাতাল হয়েছিল, তখন ওই
নোটিস টাঙানো হয়েছিল। ওটা আগেই ছিঁড়ে ফেলা উচিত ছিল। এ বার সরিয়ে দেওয়া হবে।’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে
(চলবে)