এই রকম ভিড় সামাল দেওয়ার পথ খুঁজছেন রেলকর্তারা। —ফাইল চিত্র
‘বিধিনিষেধ মেনে’ মেট্রো চললে আপত্তি নেই রাজ্যের। বুধবার তেমনটাই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই সব ‘বিধিনিষেধ’ আদতে কী এবং কী ভাবে তা মানা সম্ভব, সে ব্যাপারে এখনও সম্যক ধারণা নেই মেট্রোকর্তাদের। একই অবস্থা লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও।
মেট্রো এবং রেলের কর্তারা বলছেন, ‘‘দূরত্ব-বিধি মেনে ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ভিড়ের আগাম হদিস পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার বিষয়টি কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, সেটাই চিন্তার বিষয়।’’ ‘আনলক’ পর্বে অধিকাংশ মানুষই কাজে বেরোচ্ছেন। লোকাল ট্রেন ও মেট্রো বন্ধ থাকায় অনেকেই অন্য গণপরিবহণ, মোটরবাইক বা নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করছেন। রেল কর্তৃপক্ষের মতে, লোকাল ট্রেন চালু হলে বেশির ভাগ নিত্যযাত্রীই সেই পরিষেবা ব্যবহার করবেন। পুজোর আগে ভিড় আরও বাড়তে পারে।
মেট্রো নিয়েও একই মত আধিকারিকদের একাংশের। তাঁরাও জানেন না, মেট্রো চালুর পরে কী ধরনের ‘বিধিনিষেধ’ বলবৎ করা হবে। প্রতি বছরই পুজোর মরসুমে মেট্রোয় অত্যধিক ভিড় হয়। কর্তাদের মতে, করোনা আবহে যাত্রীদের স্টেশনে ঢোকার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হলেও প্ল্যাটফর্মের ভিড় সব সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে যাত্রীদের নিজস্ব সচেতনতার উপরেই নির্ভর করতে হবে।
তবু কয়েকটি বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যেমন, কাউন্টারে ভিড় এড়াতে স্মার্ট কার্ড ব্যবহারে জোর দেওয়া হবে। স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করা যাবে অ্যাপের মাধ্যমে। কিন্তু এত কিছুর পরেও কোন স্টেশনে কত যাত্রী নামবেন বা উঠবেন, তা আগাম জানা সম্ভব নয়। কোথাও কোথাও আচমকা ভিড় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মেট্রোর আধিকারিকেরা। লোকাল ট্রেনের মতো মেট্রোকে গ্যালপিং করা সম্ভব নয়। আবার প্রান্তিক স্টেশনে মেট্রোর সব আসন ভরে গেলে অন্য কোনও স্টেশন থেকে সেই ট্রেনে কেউ উঠবেন না, এমন ব্যবস্থা চালু করাও কার্যত অসম্ভব।
রেল প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দূরত্ব-বিধি মানতে প্রতিটি স্টেশনে ঢোকার ও বেরোনোর পথ আলাদা করা হবে। টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। হকারদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর যে সব স্টেশনে খুব ভিড় হয়, সেখানে তা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের সাহায্য চাওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শিয়ালদহ, হাওড়ার মতো বড় স্টেশনে এমন ব্যবস্থা চালু করা সহজ হলেও শহরতলির স্টেশনগুলিতে কি তা চালু করা যাবে? ব্যস্ত সময়ে তো ওই সব স্টেশনেও খুব ভিড় হয়। যেমন, দক্ষিণেশ্বর কিংবা বেলঘরিয়া স্টেশনে ঢোকার ও বেরোনোর একাধিক পথ রয়েছে। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে ওই সব স্টেশনে ভিড় বেশি থাকলে ‘বিধিনিষেধ’ মেনে চলা কি সম্ভব হবে?
প্রশ্ন যেখানে
• প্ল্যাটফর্মের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কী উপায়ে
কোন স্টেশনে কবে কেমন ভিড় হবে, তার আন্দাজই বা মিলবে কী ভাবে
• মেট্রো বা লোকালের প্রথম স্টেশনেই ট্রেন ভরে গেলে কী করণীয়
• শহরতলির স্টেশনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ কি আদৌ সম্ভব
• বিধি মানার বিষয়টি কি যাত্রীদের ‘শুভ বুদ্ধি’র উপরে ছেড়ে দেওয়া যায়
রেলকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভিড়প্রবণ কয়েকটি স্টেশন ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন আধিকারিকেরা। কোথাও স্টেশনে ঢোকার একাধিক পথ পাঁচিল তুলে আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। কোথাও আবার রেলরক্ষী বাহিনী দিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণের চিন্তাভাবনা চলছে। তবে শিয়ালদহের ডিআরএম শীলেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘কোথায় কী বিধিনিষেধ চালু হবে, তা এখনও স্থির হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদেরই মেট্রোয় ওঠার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিষেবা শুরুর কথা বলছেন আধিকারিকদের একাংশ। কিন্তু সেটাও কতটা কিংবা কত দিন কার্যকর করা সম্ভব, তা স্পষ্ট নয়। ফলে কী ‘বিধিনিষেধ মেনে’ ফের শহরে মেট্রো বা লোকাল ট্রেন ছুটবে, তা অজানা!