প্রতীকী ছবি
রোগী-প্রত্যাখ্যান নিয়ে দু’দিন আগেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। বুধবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে দেন, রোগী ফেরানো যাবে না। এ নিয়ে অ্যাডভাইজ়রি জারি করবে রাজ্য সরকার। সেই মতো অ্যাডভাইজ়রি জারি করে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, কারণ যা-ই হোক, কোনও অবস্থাতেই রোগী ফেরানো যাবে না! তাতে অবশ্য রোগী-প্রত্যাখ্যানের অভিযোগে ছেদ পড়েনি। গত ৭২ ঘণ্টায় এ ধরনের দু’টি অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
প্রথম ঘটনার ক্ষেত্রে মৃত চিকিৎসক শিবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয় সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন, কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে ওই চিকিৎসকের। নিজেকে মৃতের ভগ্নীপতি বলে দাবি করে সপ্তর্ষি লিখেছেন, গত সোমবার শহরের প্রায় সব ক’টি বড় হাসপাতালে চেষ্টা করেছিলেন। সেই তালিকায় স্বভূমি সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতাল, সল্টলেকের কোভিড হাসপাতাল, পঞ্চসায়র, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর এবং বাইপাসের ধারে অবস্থিত আরও অন্তত চারটি হাসপাতালের নাম রয়েছে।
ওই ব্যক্তির দাবি, প্রতিটি হাসপাতালই জানিয়ে দেয়, বেলেঘাটা আইডি বা এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষ লিখে দিলে তবেই তারা ওই চিকিৎসককে ভর্তি নেবে। অগত্যা পরদিন এম আর বাঙুরেই ভর্তি করানো হয় ওই চিকিৎসককে। তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। এম আর বাঙুর নিয়েও অসন্তুষ্ট সপ্তর্ষি। অথচ, স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত বা করোনা-আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, এমন কারও চিকিৎসার জন্য সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: টুইটারে খবর, সাহায্য পরিযায়ী শ্রমিকদের
দ্বিতীয় ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। ৪৫ বছরের এক রোগীর চিকিৎসক-আত্মীয় জানান, সে দিন সন্ধ্যায় তাঁর ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে প্রথমে তাঁকে স্বভূমি সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই আত্মীয় বলেন, ‘‘আমি নিজে চিকিৎসক। তাই আমার খুড়তুতো ভাই যে সারি (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) রোগী, তা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ হল না।’’ এর পরে ওই চিকিৎসক নিজে যে হাসপাতালে যুক্ত, সেখানে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকেও প্রত্যাখ্যান জোটে। পরদিন বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভাইকে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, তাঁর করোনা-রিপোর্ট অবশ্য নেগেটিভ এসেছে।
স্বভূমি সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালের দাবি, প্রথম ঘটনায় যে চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে, ওই নামের কেউ আসেননি। দ্বিতীয় ঘটনা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য, শয্যা না থাকলে কী করা যাবে! করোনা হয়নি, এমন রোগীদের সঙ্গে করোনা-সন্দেহভাজনদের রাখলে তো সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। বেসরকারি কোভিড হাসপাতালও ওই নামের কোনও রোগী আসেননি বলে দাবি করে।
পঞ্চসায়রের এক বেসরকারি হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘শয্যা খালি থাকলেও কোভিড রোগীদের ভর্তি নিতে পারছি না। সাতটি আইসোলেশন শয্যার অনুমতি থাকলেও এখন ১৪ জন করোনা-রোগী ভর্তি রয়েছেন। পরিকাঠামো না থাকায় আরও বেশি করে করোনা সন্দেহভাজনদের ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। সংক্রমণের কথাও ভাবতে হচ্ছে।’’ আর একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার অলোক রায় বলেন, ‘‘শয্যা না থাকলে রোগী কী ভাবে নেব? সরকার অ্যাডভাইজ়রি জারি করলেও বেসরকারি হাসপাতালের উপরে কেন চাপ বাড়ছে, সেটাও ভাবতে হবে!’’
আরও পড়ুন: খাবার দাও, ত্রাণ চাইল হনুমানেরাও
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)