অপেক্ষা: লকডাউনের জেরে শুরু হয়েছে রক্তের আকাল। বুধবার, মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে রোগীর পরিজনেদের ভিড়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রক্ত পেতে অন্তত তিন থেকে চার জন দাতাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে। এর পরেও প্রয়োজন যা-ই থাকুক, রক্ত মিলছে মাত্র এক ইউনিট। কোথাও আবার লকডাউনের বাধা অতিক্রম করে দাতাদের নিয়ে গিয়েও সুরাহা মিলছে না। বলে দেওয়া হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট গ্রুপের রক্ত নেই। টানা লকডাউনে শহরের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির এমনিই রক্তশূন্য অবস্থা বলে জানাচ্ছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘শিবির করা ছাড়া এখন উপায় নেই। তবে স্বাস্থ্য ভবন শিবির করতে উদ্যোগী হওয়ার বদলে রক্তদান শিবিরের কিছু ছোঁয়াচ বাঁচানো নিয়মবিধি ঘোষণা করেই চুপ!”
লকডাউন শুরুর সময় থেকেই রক্তদানের জন্য জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। তবে রক্ত পেতে ভোগান্তির একাধিক অভিযোগ সামনে আসা শুরু হওয়ার পরে গত ২৩ মার্চ জরুরি ভিত্তিতে রক্তদান কর্মসূচি করার অনুমতি দিয়ে এক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) জারি করে স্বাস্থ্য ভবন। তাতে বলা হয়, এখন এক দিনে সর্বাধিক ৩০ জন দাতার রক্ত সংগ্রহ করা যাবে। প্যান্ডেল নয়, শিবির করতে হবে স্থায়ী ছাউনির নীচে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিবিরে চার জনের বেশি মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এক জনের রক্তদান করা হয়ে গেলে তিনি যে শয্যায় ছিলেন সেটি স্যানিটাইজ় করে তবেই পরের জনকে তাতে শোয়াতে বলা হয়। স্বাস্থ্য দফতর এ-ও জানায়, শিবির করতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
তবে এপ্রিল মাসে পুলিশের রক্তদান শিবির শুরু হওয়ার পরে এই নির্দেশিকা সাময়িক ভাবে প্রত্যাহার করা হয়। অন্য শিবিরের অনুমতি দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এপ্রিলের শেষে পুলিশের শিবিরে দাতার সংখ্যা কমতে থাকায় ফের পরিস্থিতি জটিল হয়। এই অবস্থায় গত সপ্তাহে ২৩ মার্চের সেই নির্দেশিকা নতুন করে জারি করে স্বাস্থ্য দফতর। তবু রক্তের ঘাটতি কমছে না বলে দাবি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির। কলকাতার সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজ তো বটেই, মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কেও রক্তের ইউনিটের সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: লকডাউনে সুযোগ বুঝে ফাঁদ পাতছে সাইবার প্রতারকেরা
রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের পরিচালন সমিতির সদস্য অচিন্ত্য লাহা বলেন, “চাইলেই ছোঁয়াচ বাঁচানোর নিয়ম মেনে শিবির করা যাচ্ছে না এখন। কন্টেনমেন্ট জ়োন বা করোনা-আক্রান্ত রয়েছেন এমন জায়গায় শিবির করার অনুমতিই তো মিলছে না।” অচিন্ত্যের দাবি, “এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনেরই আরও বেশি করে উদ্যোগী হওয়া উচিত।”
রাজ্য ব্লাড সেলের প্রোগ্রাম অফিসার তথা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বিপ্লবেন্দু তালুকদার যদিও বললেন, “রক্তের ঘাটতি আছে ঠিকই, কিন্তু রোগীর সংখ্যাও তো এখন অন্য সময়ের তুলনায় কম। সাধারণ সময়ে কলকাতায় প্রতিদিন ২৪০০ ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে। এখন সেটা ৭০০ থেকে ৮০০ ইউনিটেই হয়ে যাচ্ছে। তবে এই রক্তের জোগান স্বাভাবিক রাখতেই নিয়মবিধি মেনে কর্মসূচি করতে বলা হয়েছে।” রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের যুগ্ম অধিকর্তা (ব্লাড সেফটি) গোপালচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “স্বাভাবিক ভাবেই ঘরবন্দি শহরে রক্তের জোগান কম হচ্ছে। তবে একে ঠিক ঘাটতি বলছি না আমরা। এটা একটা সমস্যা। নিয়ম মেনে শিবির করতে পারলে সমস্যা মালুম হবে না।”
রক্তদান আন্দোলনের কর্মী বিশ্বরূপ বিশ্বাস বললেন, “সমস্যা মেটাবে কে? বহু ছোট ছোট সংগঠন এই পরিস্থিতিতে উদ্যোগী হচ্ছে।
তাঁরা পারলে পরিস্থিতি বুঝে সরকার নিজে কেন শিবির করার ব্যাপারে উদ্যোগী হবে না! শিক্ষক সংগঠনগুলিকেও নিজেদের মতো করে রক্তদান কর্মসূচি করার অনুরোধ জানানো যেতে পারে।” যেমন আজ, বৃহস্পতিবারই মানিকতলার একটি হাসপাতালের কর্মীরা তাঁদের রোগীদের জন্য নিজেরাই রক্তদান করতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন। বনহুগলির একটি ক্লাব আবার গোটা মে মাস জুড়েই প্রতি রবিবার রক্তদানের কর্মসূচি নিয়েছে।
আরও পড়ুন: বরাত আসেনি একটিও, সঙ্কটে কুমোরটুলি
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)