সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলছে রক্তদান। সোমবার, বিষ্ণুপুরের গোতলা হাটে। নিজস্ব চিত্র
একবারে তিরিশ জনের বেশি দাতার থেকে রক্ত নেওয়া বারণ। রক্ত নেওয়ার পরে প্রত্যেক বার শয্যা জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া বাধ্যতামূলক।
শামিয়ানা খাটিয়ে বা অস্থায়ী নির্মাণেও শিবির করা নিষিদ্ধ। করোনা-পরিস্থিতির কারণে এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই রবিবার রক্তদান শিবির করলেন অসুস্থ বাবার জন্য রক্ত পেতে হন্যে হওয়া এক ছেলে ও তাঁর বন্ধুরা। যাঁদের উদ্যোগে রক্তের আকালের মধ্যেই এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছল ২০ ইউনিট রক্ত।
৩ এপ্রিল রক্তাল্পতার সমস্যা নিয়ে জোকা ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের গোতলা হাট এলাকার বাসিন্দা প্রবোধ কাঁঠাল নামে এক ব্যক্তিকে। বছর চুয়ান্নর প্রবোধবাবুকে দ্রুত তিন ইউনিট রক্ত দিতে হবে বলে জানায় হাসপাতাল। সেই রক্ত জোগাড় করতে লকডাউনের শহরে ছুটে বেড়াতে হয় প্রবোধবাবুর ছেলে তমাল ও তাঁর বন্ধুদের। তমালের বন্ধু শুভঙ্করশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি এবং বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক বলে দিয়েছিল রক্ত নেই। এক বেসরকারি সংস্থা জানায়, ১৩০০ টাকায় এক ইউনিট রক্ত দেবে। তবে আমাদেরও রক্ত দিতে হবে। রক্ত দিতে অসুবিধা নেই। কিন্তু কেনার টাকা ছিল না।’’
আরও পড়ুন: লকডাউনে উদ্ধার লীলা মজুমদারের পাণ্ডুলিপি
অবশেষে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক সংস্থার মাধ্যমে কাকদ্বীপ হাসপাতাল থেকে এক ইউনিট রক্ত পান তমালরা। এর দু’দিন পরে আরও এক ইউনিট রক্ত মেলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। আপাতত সুস্থ হয়ে প্রবোধবাবু বাড়ি ফিরেছেন। তমাল বললেন, ‘‘ওই রাতটা ভুলব না। প্রথমে ভেবেছিলাম, লকডাউন উঠলেই রক্তদান শিবির করব। কিন্তু রক্তের প্রয়োজন বেশি ভেবে এখনই করলাম। আরও অনেকে রক্ত দিতে পারতেন, কিন্তু এখন তো একসঙ্গে দু’জনের বেশি রক্তদাতাকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না। শয্যাগুলি স্যানিটাইজ় করতে সময় লেগে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রক্ত সংরক্ষণ করাটাও চিন্তায় থাকছে।’’
পুলিশের অনুমতি নিয়ে গোতলা হাটের একটি বন্ধ বাজার ভবনে শিবিরটি হয়। সেখানে পরপর চারটি শয্যা পাতা হয়। এক এবং তিন নম্বর শয্যায় দুই রক্তদাতাকে শোয়ানো হয়। তাঁদের রক্তদান শেষ হওয়ার পরে ওই দুই শয্যা জীবাণুমুক্ত করার সময়ে অন্য দুই শয্যায় চলতে থাকে রক্তদান প্রক্রিয়া। একই ভাবে দুই এবং চার নম্বর শয্যা জীবাণুমুক্ত করার সময়ে রক্ত নেওয়া হয় এক এবং তিন নম্বর শয্যার দাতার থেকে। মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার রেখে ছোঁয়াচ বাঁচানোর বাধ্যতামূলক নিয়ম তো ছিলই।
রক্তদান আন্দোলনের কর্মী তথা জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সদস্য বিশ্বরূপ বসাক বললেন, ‘‘তিন মাসে বহু শিবির বাতিল হয়েছে। রক্তের চরম আকাল চলছে। এর মধ্যে এমন উদ্যোগ ভাবা যায় না। বহু রোগীর পরিবারকে দেখেছি, রক্ত নেওয়ার পরে আর রক্তদান করে সমাজে সাহায্য ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন না। অনেকে যোগাযোগই রাখতে চান না। সেখানে এই যুবকেরা দৃষ্টান্ত।’’ এখনও টানা কথা বলতে গিয়ে হাঁপ ধরা প্রবোধবাবু বললেন, ‘‘আমার মতো কত লোক রক্তের জন্য কষ্ট পান। ছেলেগুলোর জন্য গর্ব হচ্ছে। ওঁরা যতটা পেরেছেন করেছেন। এমন উদ্যোগ অন্যেরাও নিন।’’
আরও পড়ুন: সাত কোটির গার্ডরেল বসিয়েও নাজেহাল পুলিশ