Coronavirus

লকডাউনের শহরে বাড়ছে ছিনতাইয়ের প্রবণতা

গত কয়েক দিনে কলকাতা পুলিশের পরিসংখ্যানও বলছে, কিছু এলাকা থেকে এই ধরনের ছিনতাইয়ের অভিযোগ এসেছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিপদ কি শুধু করোনায়? টানা লকডাউনে শহরের ফাঁকা রাস্তাও তাঁদের জন্য সমান বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে জানাচ্ছেন প্রবীণদের একটি বড় অংশ। জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়ে তাঁদের অনেককেই ছিনতাইবাজের খপ্পরে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। কাউকে ব্লেড দেখিয়ে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা তো বটেই, বাজারের সামগ্রীও লুট করে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার ফাঁকা রাস্তায় ব্যাঙ্ক-ফেরতা বৃদ্ধাকে আবার লুট করতে আসা ছিনতাইবাজ বলেছে, ‘‘হাতে ছুরি আছে। চালিয়ে দেব। আমরা খেতে পাচ্ছি না, তুমি একা খাবে!’’

Advertisement

গত কয়েক দিনে কলকাতা পুলিশের পরিসংখ্যানও বলছে, কিছু এলাকা থেকে এই ধরনের ছিনতাইয়ের অভিযোগ এসেছে। সব চেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে পর্ণশ্রী, বেহালা, কসবা, টালিগঞ্জ, উল্টোডাঙা এবং শোভাবাজার এলাকা থেকে। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, এ কি শুধুই ছিনতাইবাজদের কারবার? না কি দুর্বৃত্তায়নে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ লকডাউনে কর্মহীন ও খাবার জোগাতে হিমশিম খাওয়া মানুষও? সমাজতত্ত্বের শিক্ষক থেকে মনোরোগ চিকিৎসকদের বড় অংশই বলছেন, যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই এই ধরনের দুর্বৃত্তায়ন বাড়ে। কারণ, কর্মহীনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খেতে না-পাওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ে। প্রথমে নিশানা হন বয়স্কেরা। পরে ধীরে ধীরে তা থেকে আক্রান্ত হন সব স্তরের মানুষ। তাই করোনার পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাও এখন বড় লড়াই।

বৃহস্পতিবার সকালে অশীতিপর এক বৃদ্ধের এ ভাবেই আক্রান্ত হওয়ার খবর গিয়েছিল বড়তলা থানায়। সকাল ১০টা নাগাদ বাজার করে ফিরছিলেন শোভাবাজার এলাকার ওই বাসিন্দা। বৃদ্ধের অভিযোগ, নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের কাছে পিছন থেকে এক যুবক তাঁকে জাপটে ধরে। সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা দিয়ে না দিলে ব্লেড চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। টাকা নিয়ে সেই ছিনতাইবাজ পালিয়ে যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলের কাছেই দাঁড়ানো ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের বিষয়টি জানান বৃদ্ধ। কিন্তু অভিযোগ, বৃদ্ধকে তাঁরা উল্টে বলেন, ‘‘আমরা ট্র্যাফিক পুলিশ। কিছু করতে পারব না। থানায় গিয়ে বলুন।’’ এলাকার কাউন্সিলর মোহনকুমার গুপ্ত বললেন, ‘‘পুলিশকে নিজে বিষয়টি জানিয়েছি। পাড়ার নিরাপত্তার প্রশ্ন। কিন্তু বহু ছিনতাইকারী এই সময়ে বাইরে ঘুরছে। পুলিশের অন্য ব্যস্ততাও বেড়েছে। সেই সুযোগেই হয়তো এ সব আরও বেড়ে গিয়েছে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় অবশ্য বড়তলা থানা থেকে পুলিশ ওই বৃদ্ধের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। তার খোঁজ চলছে।

Advertisement

একই রকম অভিযোগ টালিগঞ্জ এলাকার এক বৃদ্ধার। সাইকেলে আসা তিন যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে মুখে গামছা চাপা দিয়ে গলার এবং কানের গয়না ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। পুলিশে অভিযোগ করলেও গত এক সপ্তাহে কিছুই সুরাহা হয়নি বলে দাবি বৃদ্ধার। তিনি বলেন, ‘‘এখন বাড়ি থেকে বেরোনো বারণ। কিন্তু খুব দরকারে যদি বেরোতেও হয়, সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা থাকছে না। ছেলেগুলো পালিয়ে যাওয়ার সময়ে বলছিল, আমার গলার আর কানের গয়না দিয়েই নাকি এখন কয়েক সপ্তাহ চলে যাবে ওদের।’’

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা এই ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়াতে বাধ্য। যাঁরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তাঁদের উপরেই আক্রমণ প্রথমে হবে। দুর্বলের তালিকায় সবার উপরে তো প্রবীণেরাই থাকেন।’’ তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিকে অনেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন। ফাঁকা রাস্তার সুযোগ নেবেন।

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবও বললেন, ‘‘কর্মহীনতা বা বেকারত্ব বাড়লে এই ধরনের অপরাধ যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। এক সময়ে হকার্স কর্নার উঠে যাওয়ার সময়েও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। এর সঙ্গে অনেকেই ভাবতে পারেন, পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত। তাই তাঁদের দেখার কেউ নেই।’’ পুলিশ-প্রশাসনের কড়া অবস্থানের পাশাপাশি দু’জনেই জানালেন, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানোই এই অপরাধ রোখার একমাত্র পথ। খাবারের নিরাপত্তা, বেঁচে থাকার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে জেলে ভরেও অপরাধ রোখা যাবে না!

শহরে ছিনতাই বৃদ্ধির প্রসঙ্গে লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। এমন প্রবণতা বাড়তে দেওয়া যায় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement