প্রতীকী ছবি।
গাড়ির চালক আর ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মধ্যে প্রবল জোরাজুরি চলছে হাজরা মোড়ে। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলছেন, “করোনার মধ্যে অত কিছু হাতে নিয়ে ছুঁয়ে দেখা যাবে না। লাইসেন্স দিন, কোর্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি! সেখানে বুঝে নেবেন।” চালক নাছোড়। সমানে বলে চলেছেন, “দয়া করে কোর্টে পাঠাবেন না। জরিমানা এখানেই নিয়ে নিন। আমার আপত্তি নেই। আমার বন্ধুর লাইসেন্স তিন মাস ধরে এ ভাবেই আটকে আছে, আনলকেও খুলছে না।”
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ— আনলক ১-এ পথে নেমে সঙ্কটে সকলেই। আমপানের পরে এখনও শহরের সব ট্র্যাফিক সিগন্যাল স্বাভাবিক হয়নি। সিসি ক্যামেরাগুলিও আগের কর্মদক্ষতায় ফেরেনি। ফলে ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে জরিমানা করা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশকে হাতে লিখেই জরিমানা করতে হচ্ছে। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই ছোঁয়াচ এড়াতে গাড়ি বা মোটরবাইকের কাগজপত্র এবং লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে আদালতে পাঠিয়েই দায় সারতে চাইছে তারা। এ দিকে, জরিমানা মিটিয়ে গাড়ির কাগজপত্র আদালত থেকে ছাড়াতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে অনেকের। কারণ, কোনও আদালতেই শুরু হয়নি মোটর ভেহিক্ল আইন সংক্রান্ত মামলার কাজ।
শিয়ালদহ আদালত সূত্রের খবর, শনিবার রাত পর্যন্ত সেখানে প্রায় সাড়ে ছ’শোর বেশি এই ধরনের মামলা জমেছে। আলিপুর আদালতের মোটর ভেহিক্ল দফতরের আধিকারিক আবার জানাচ্ছেন, লকডাউনের শুরু থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত আসা এই ধরনের মামলার সংখ্যা সেখানে প্রায় ৬৩০টি। এ ছাড়া, লকডাউনের আগেরও কয়েকটি মামলার নিষ্পত্তি বাকি। ব্যাঙ্কশাল আদালতে এই ধরনের জমা মামলার সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
শিয়ালদহ আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চৌধুরী জানান, ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে ঘটনাস্থলে বা এসএমএসের মাধ্যমে জরিমানা করা হতে পারে। তবে গুরুতর আইনভঙ্গ হলে বা থানা কোনও গাড়ি ধরলে সে ক্ষেত্রে ‘স্পট ফাইন’ হয় না। সবটাই আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী অন্যায় ভাবে তাঁকে স্পট ফাইন করেছেন, তখন তিনি ঘটনাস্থলে জরিমানা না-ও দিতে চাইতে পারেন। তখন সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী সেই চালকের লাইসেন্স বা গাড়ির অন্য কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে আদালতে পাঠিয়ে দেন। ওই ব্যক্তিকে দেওয়া হয় ‘সিজ়ার তালিকা’। মামলার রায় পক্ষে গেলে হাতে হাতে, আর রায় বিপক্ষে গেলে জরিমানা দিয়ে এর পরে ব্যক্তি কাগজপত্র ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আপাতত এই কাজই বন্ধ আদালতে।
গায়ক কালিকাপ্রসাদের গাড়ি দুর্ঘটনার মামলায় যুক্ত আলিপুর আদালতের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “আদালতে কাগজ আটকে থাকছে বলে অনেকেই এখন রাস্তায় জরিমানা করে বিষয়টি মেটাতে চাইছেন। না-হলে তো লাইসেন্স বা কাগজপত্র ছাড়াই গাড়ি চালাতে হবে।”
এ ভাবে গাড়ি চালানো কি নিরাপদ? আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ওই ভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে ফের ধরা পড়লে ‘সিজ়ার তালিকা’র কাগজ দেখাতে হয়। তা হলে নতুন করে জরিমানা দিতে হয় না। তবে ওই পরিস্থিতিতে ফের দুর্ঘটনা ঘটালে ‘হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার’ বা স্বভাবগত অপরাধীর তকমা লাগাতে পারে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে কড়া মামলা হতে পারে। লাইসেন্স বাতিল হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। আদালতে আগের মতো কাজ চালু হওয়া পর্যন্ত এ ভাবেই ভুগতে হবে বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বললেন, “বিষয়টা আদালতের। ঘটনাস্থলে সাইটেশন কেস আগের মতোই চলছে। বিগড়ে যাওয়া সমস্ত সিসি ক্যামেরাও কয়েক দিনেই কাজ শুরু করবে।” যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তার আবার মন্তব্য, “জরিমানা মেটাতে গিয়ে ভোগান্তি হবে বুঝে চালকেরা যদি একটু সতর্ক হন, তাতে মন্দ কী!”