যন্ত্রণা: দেগঙ্গার বাড়িতে অভিজিৎ মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
রাজ্য সরকারের দমকল দফতরের কর্মী। ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে। বাড়ি ফিরতে চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইলেও সুরাহা মেলেনি। অগত্যা এক লক্ষ ১২ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে তাঁরা ফিরলেন দেগঙ্গার কলসুরের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ওই দম্পতি, অভিজিৎ মল্লিক এবং তাঁর স্ত্রী।
অভিজিতের স্ত্রী কাজ করেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনে বাড়ি ফিরতে যে এত টাকা মাসুল গুনতে হবে কখনও ভাবিনি।’’ তবে বাড়ি ফিরে স্বেচ্ছায় গৃহ-পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তাঁরা।
জানুয়ারি মাসে ক্যানসার ধরা পড়ে অভিজিতের। চিকিৎসার জন্য ফেব্রুয়ারিতে ভেলোরে যান। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও এক শ্যালক।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন সংক্রমণ ৮২৬ জনের, আক্রান্ত বেড়ে ১২৭৫৯, মৃত ৪২০
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু ৭ থেকে বেড়ে হল ১০, সক্রিয় রোগী ১৪৪
বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল ২৫ মার্চ। কিন্তু ২৩ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় রেল পরিষেবা। অগত্যা ২৬ মার্চ বিমানের টিকিট কাটেন তিন জন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। বন্ধ হয়ে যায় উড়ান পরিষেবাও। ট্রেন ও বিমানের টিকিটের টাকা ফেরত না-পাওয়ায় অর্থসঙ্কটে পড়েন অভিজিতেরা। অবশেষে তাঁরা ভেলোরের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু, ওষুধ ও অন্য পরিষেবা মেলেনি।
অভিজিৎ জানান, এর পরে বাড়ি ফেরার আর্জি জানিয়ে তাঁরা নবান্নে ফোন করেন। কিন্তু অভিযোগ, দিনের পর দিন কেটে গেলেও বাড়ি ফেরার জন্য সাহায্য মেলেনি। শেষে নিরুপায় হয়ে চেন্নাই থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে বুধবার রাতে দেগঙ্গার বাড়িতে ফেরেন ওই দম্পতি। অভিজিতের স্ত্রী বলেন, ‘‘৩৮ ঘণ্টা টানা অ্যাম্বুল্যান্সে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছি। শুধুমাত্র স্বামীকে ফল খাইয়ে।’’
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অভিজিৎ। আপাতত ঘরেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। এ দিন তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘লকডাউনে আটকে থাকার যন্ত্রণা যে কী, তা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারলাম। কারও থেকে এতটুকুও সাহায্য পাইনি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)