স্তব্ধ: বন্ধ সব দোকান, সুনসান বইপাড়া। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
লকডাউন চালু হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। প্রকাশক থেকে বই ব্যবসায়ী, কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় দোকান বন্ধ সবারই। চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন পাঠ্যপুস্তক থেকে গল্পের বই, সব ধরনের বইয়ের ব্যবসায়ীরাই। তাঁদের মতে, পাড়ার কিছু বইয়ের দোকান খুলে খুব একটা লাভ নেই। চাহিদা মতো বেশির ভাগ বই-ই হাতে পাবেন না পড়ুয়ারা। কারণ বইপাড়া বন্ধ।
ব্যবসায়ীরা জানান, কবে বইয়ের দোকান খোলা যাবে তার স্পষ্ট উত্তর নেই প্রশাসনের কাছেও। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। বইপাড়ার অদূরে আবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফলে প্রশাসনের তরফে এখনই দোকান খুলতে বারণ করা হয়েছে। এক বই ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের চার দিকে সংক্রমিত এলাকা। বইপাড়া দ্বীপের মতো জেগে আছে। এই অবস্থায় দোকান খোলার সাহস পাচ্ছি না।”
ব্যবসায়ীদের মতে, পরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে বইয়ের দোকান খুলেও কোনও লাভ নেই। বুলবুল ইসলাম নামে এক প্রকাশক তথা বই ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে খুচরো ব্যবসার পাশাপাশি বইয়ের পাইকারি ব্যবসাও চলে। ট্রেনে, বাসে চেপে ব্যবসায়ীরা পাইকারি হারে বই কিনতে আসেন। গণ পরিবহণ চালু না হলে ওঁরাও আসতে পারবেন না। তাই এই অবস্থায় দোকান খুলেও কোনও সুবিধা হবে না।”
এক পাঠ্যবই ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা বেশির ভাগ আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ডের বই বিক্রি করেন। ওই সব বই বেশির ভাগই আসে দিল্লি বা মুম্বই থেকে। লকডাউন না উঠলে পরিবহণের অভাবে ওই সব বইও এ রাজ্যে আসবে না। ফলে তাঁরা চাইলেও পড়ুয়াদের কাছে চাহিদা মতো বই পৌঁছে দিতে পারবেন না।
দীর্ঘদিন বইয়ের দোকান বন্ধ থাকায় একের পর এক বইয়ের মরসুমও চলে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই। দোলগোবিন্দ পাত্র নামে এক বই ব্যবসায়ী জানান, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে বিভিন্ন পরীক্ষার ফল বেরোয়। ওই সময়ে পাঠ্যবইয়ের প্রচুর চাহিদা থাকে। এ বার সেই ব্যবসা সম্পূর্ণ মার খেয়েছে। কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ীদের সংগঠন কলকাতা জেলা পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের আশঙ্কা এই শিক্ষাবর্ষে কলেজের সমস্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা না হওয়ায় কলেজের সব বিষয়ের বইয়ের চাহিদাও হয়তো সে রকম থাকবে না। লকডাউনের কারণে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি না হলে সেই সংক্রান্ত বইগুলিও বিক্রি হবে না।
ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির বই প্রতি বছর এক থাকে না। প্রতি বছরই ওই সব বই পাল্টায়। ফলে এই বছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার যে সব বই বিক্রি হবে না সেগুলি পড়েই থাকবে। আর্থিক ক্ষতি হবে। দোলগোবিন্দের মতে, “এত সব ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পরে অনেক বই ব্যবসায়ীর হয়তো তাঁদের সমস্ত কর্মচারীকে রাখার মতো সামর্থ্য থাকবে না। ওই সব কর্মচারীই বা কী করবেন এই ভেবেও আমরা চিন্তায় রয়েছি।”
প্রকাশকেরা জানান, কলেজ স্ট্রিটে সাত-আট হাজার শ্রমিক নতুন বই বাঁধাইয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁরা আটকে পড়ায় প্রচুর বই বাঁধাই না হয়ে পড়ে রয়েছে। লকডাউন উঠলেও ওই শ্রমিকেরা আসতে না পারলে সব বইয়ের জোগান দেওয়াও সম্ভব হবে না।
ব্যবসায়ীদের একাংশের আর্জি, পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হলে নির্ধারিত দিন ধরে ভাগে ভাগে দোকান খুলতে দিক প্রশাসন। সেই সঙ্গে রাস্তায় বইয়ের গাড়ি যাতায়াতের অনুমতি পেলেও বই সরবরাহের সমস্যার খানিকটা সমাধান হবে।
বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দেড় মাসের উপরে দোকান বন্ধ। অনেক বই গুদামে পড়ে রয়েছে। এর ফলে প্রচুর বইয়ে পোকা ধরতে পারে। তাই দোকান বা গুদাম খুললে সেগুলি পরিষ্কার করাও খুব জরুরি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)