প্রতীকী ছবি।
এ দেশে মানসিক রোগের শিকার প্রায় ১৫ কোটি মানুষ। প্রতি ঘণ্টায় আত্মঘাতী হন ১৬ জন। কোভিড অতিমারির আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রোগের তালিকায় দ্রুত প্রথমে উঠে আসতে চলেছে মানসিক অবসাদ। আর এই পরিস্থিতির অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড ১৯। মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, অতিমারি পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা হতে চলেছে ভয়াবহ।
মানসিক চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা কোন স্তরে, তা বোঝা যাবে দেশের জিডিপি-র দিকে নজর দিলেই। জিডিপি-র ১.৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকে স্বাস্থ্য খাতে। আর স্বাস্থ্য খাতের ০.০৫ শতাংশ বরাদ্দ যায় মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায়! অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার এই খাতে অর্থ বরাদ্দ না বাড়ালে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের জনসংখ্যার কর্মক্ষমতা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভারতে মানসিক রোগীর ৮৫ শতাংশই এখনও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। তাঁদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে মজবুত করতে হবে পরিকাঠামো।
আজ, ১০ অক্টোবর ‘ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ডে’। এ বছরের থিম, ‘মেন্টাল হেলথ ফর অল, গ্রেটার ইনভেস্টমেন্ট-গ্রেটার অ্যাকসেস’ (সকলের জন্য মানসিক সুস্বাস্থ্য, বেশি বরাদ্দ- বৃহত্তর পরিষেবা)। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য খাতে সামান্য এই বরাদ্দ নিয়ে কী ভাবে সকলের কাছে চিকিৎসা পৌঁছবে? প্রশ্ন
তুলছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। কোভিড পরিস্থিতির পৃথিবীতে এই প্রশ্ন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। সংক্রমণের আতঙ্ক, পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে একাকিত্ব, কর্মহীনতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা আরও বেশি গ্রাস করতে শুরু করেছে। এই সমস্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
“কমন মেন্টাল ডিজ়অর্ডার, সিভিয়র মেন্টাল ডিজ়অর্ডার এবং নেশাগ্রস্ত হওয়ার ফলে মনের অসুস্থতা— মূলত এই তিন ধারার হয় মানসিক রোগ। কমন মেন্টাল ডিজ়অর্ডারে আক্রান্ত রয়েছেন প্রায় ১৪ কোটি এবং সিভিয়র মেন্টাল ডিজ়অর্ডারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। শুধুমাত্র গাঁজায় আসক্ত মানুষের সংখ্যাই এ দেশে ২৫ লক্ষ। এঁদের বড় অংশ পরবর্তী জীবনে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। এঁদের এবং অন্য মনোরোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সচেতনতার প্রচারের মাধ্যমে রোগীর প্রতি পরিজন ও আশপাশের অসহযোগিতা রোখার বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নয়তো ওই থিম ভাবনার স্তরেই থেকে যাবে।” এমনটাই বলছেন মনোরোগ চিকিৎসক আবীর মুখোপাধ্যায়।
এরই মধ্যে উঠে আসছে অন্য আশঙ্কার কথাও। সাম্প্রতিক গবেষণায় ধরা পড়েছে, মস্তিষ্কের কোষ ও স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলছে কোভিড ১৯ ভাইরাস। ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি-র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজিত সরখেল বলছেন, “বয়স নির্বিশেষে ডেলিরিয়ামের (ভ্রান্ত ধারণা, আতঙ্ক, ভুল বকা) মতো মানসিক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তা সেরে যাচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ফল এখনও স্পষ্ট নয়। স্মৃতিশক্তি বা আরও বড় মানসিক ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব পড়ছে কি না, তা জানতে ফলো আপ চিকিৎসায় নির্দিষ্ট প্রশ্ন করার ব্যাপারে নির্দেশিকা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।”
এত কিছুর মধ্যেও একটি ইতিবাচক দিক দেখছেন আবীরবাবু। তাঁর মতে, “দূরদূরান্তের রোগীরা ভার্চুয়াল চিকিৎসায় কম খরচে ডাক্তার দেখাতে পারছেন। এই পদ্ধতি আগামী দিনেও প্রসারিত করতে হবে।”