প্রতীকী ছবি।
হাওড়া শহরে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, হাওড়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি। যার মধ্যে ৪৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ৭৫ জন পুলিশকর্মী। পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা ৩০৫। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, এ দিন থেকে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস, বাজার, দোকান ও গণপরিবহণ চালু হয়ে যাওয়ায় সংক্রমণ এখন লাগামছাড়া হারে বাড়বে। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে হাওড়ার চার কোভিড হাসপাতালকে।
এ দিন ৭০ শতাংশ কর্মী নিয়ে খোলে হাওড়া পুরসভা-সহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস। সেই কারণে সকাল থেকেই ফিরে আসে ভিড়ে ঠাসা পুরনো হাওড়ার ছবি। গত সপ্তাহ থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করায় সামাজিক দূরত্ব-বিধি না মানার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, এ দিন তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। হাওড়া স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড চত্বর বা কলকারখানা সংলগ্ন এলাকা— সর্বত্রই দেখা গিয়েছে এক চিত্র। বিশেষ করে শহরের রাস্তায় অবাধে চলা টোটোচালকদের দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। এক-একটি টোটোয় দু’জন করে যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও তিন-চার জন করে যাত্রী নিয়েছেন চালকেরা। তাঁদের যত্রতত্র থুতুও ফেলতে দেখা গিয়েছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অটো, টোটো-সহ গণপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কর্মীকে নিয়ম মেনে চলতে বলেছি। বেশি যাত্রী না নিতে বা যত্রতত্র থুতু ফেলতে বারণ করেছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এ বার আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন আবার অনেকেই বাস, অটোর মতো গণপরিবহণে চড়ার ঝুঁকি না-নিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছেছেন সাইকেল, স্কুটার বা বাইকে চেপে। এতে অনেকের সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব হচ্ছে বলে তাঁদের মত। হাওড়া পুরসভার এক কর্মী এ দিন সাঁকরাইল থেকে সাইকেল নিয়ে পুরসভায় আসেন।
তিনি বলেন, ‘‘এখন থেকে সাইকেলেই যাতায়াত করব। এতে অন্তত করোনার আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমবে।’’ এ দিন রাস্তায় মোটরবাইক, সাইকেলের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় যানজট হয় সকালের দিকে। হাওড়ার ফেরিঘাটগুলিতে ভিড় ছিল লকডাউনের আগের মতোই। অফিসের ব্যস্ত সময়ে অনেক বাসেই যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে পুলিশের নজরদারি ছিল বিভিন্ন জায়গায়। বাস থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের নামিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। বাসের ভাড়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে পুলিশের কাছে। সাত বা আট টাকার টিকিট দিয়ে ১০ টাকা নেওয়ার অভিযোগও জমা পড়েছে।
গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বেড়েছে, তাতে এ দিন শহরের পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, যে ভাবে এ দিন
মানুষ সামাজিক দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে পথে নেমেছেন, তার ফল মারাত্মক হতে পারে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘একে পরিযায়ী শ্রমিকেরা আসার পরে জেলা জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তার উপরে মানুষ এ দিন যে ভাবে সব তুড়ি মেরে বেরিয়ে পড়েছেন, তাতে আমরা প্রবল উদ্বিগ্ন।’’