প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্তদের তথ্য লুকোতে চাইছে রাজ্য সরকার। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এমনই ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন এক মহিলা।
লালবাজার জানিয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো ঠেকাতে এ বার হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপ-অ্যাডমিনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভুয়ো বা স্পর্শকাতর কিছু পোস্ট করা হলে সেই সদস্য ছাড়াও ভুয়ো খবর ছড়ানোর জন্য মাসুল গুনতে হবে গ্রুপ-অ্যাডমিনদের। এমনকি, আইন অমান্য করার অভিযোগে সেই অ্যাডমিনকে গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
এক পুলিশকর্তা জানান, ভুয়ো খবর ঠেকাতে মঙ্গলবারই লালবাজারে চার জন গ্রুপ-অ্যাডমিনকে ডেকে পাঠানো হয়, যাঁদের গ্রুপে করোনাভাইরাস নিয়ে ভুয়ো খবর পোস্ট করার অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তকারীদের মতে, এ সব ক্ষেত্রে গ্রুপ-অ্যাডমিনরাও তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েক জন গ্রুপ-সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এ বারই প্রথম ডেকে পাঠানো হয়েছে অ্যাডমিনদের।
পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ এবং সাইবার অপরাধ দমন শাখা শহরের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং ফেসবুক পোস্টের উপরে নজরদারি শুরু করেছে। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তারা ওই কাজ চালাচ্ছে। তাতেই ৫০টির বেশি এমন গ্রুপের সন্ধান মিলেছে, যেখানে ওই রকম ভুয়ো খবর পোস্ট করা হয়েছে। পুলিশের সাফ কথা, ভুয়ো খবর যাঁরা পোস্ট করছেন, তাঁদের পাশাপাশি ওই দোষ বর্তাবে গ্রুপ-অ্যাডমিনদের উপরেও। তাঁরাও ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হবেন।
লালবাজার জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনা নিয়ে ভুয়ো খবর পোস্ট করার জন্য কয়েক জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ২০ জনকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা সকলেই এসেছিলেন। যদিও কেন, কী উদ্দেশ্যে তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টগুলি করেছিলেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ছাড়া, গত কয়েক দিন ধরে রোজই প্রায় ১০০ জনকে ফোন করে সতর্ক করা হচ্ছে বলেও লালবাজার সূত্রের খবর।
এর আগে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মারফত ভুয়ো ভিডিয়ো, ছবি বা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে হিংসাত্মক ও গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ছেলেধরা-গুজবের সময়ে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের উপরে বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছিল।শুধু তা-ই নয়, গ্রেফতারও করা হয়েছিল কয়েক জন গ্রুপ অ্যাডমিনকে। এ বার সেই একই দাওয়াইয়ের পথে হাঁটতে চলেছেন লালবাজারের কর্তারা। ভুয়ো খবর ছড়ানো হলে গ্রুপ-অ্যাডমিনদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারাতেও মামলা রুজু হতে পারে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
নিউ আলিপুরের ওই মহিলাকে গ্রেফতারের পরেই সোমবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিউ টাউনের একটি আবাসনে করোনাভাইরাসে কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ে। ওই খবর ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন মুসলেম আলি মোল্লা ওরফে বাপন নামে এক যুবক। নিউ টাউনের টেকনো সিটি থানা তাঁকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ, ওই ভুয়ো খবরে সেই আবাসনের মধ্যে দ্রুত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসিন্দা থেকে নিরাপত্তারক্ষী— সকলেই আবাসন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন খবর পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে বাপনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, ওই আবাসনে এক ব্যক্তি ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেই জ্বরের সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনও সম্পর্ক ছিল না। অভিযোগ, বাপন সেই খবরই বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। তাতে লেখেন, ওই আবাসনে ছ’জন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাতেই আবাসনে আতঙ্ক ছড়ায়।