প্রতীকী ছবি
পুলিশবাহিনীতে করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। ইতিমধ্যেই এক হাজার ছাড়িয়েছে সেই সংখ্যা। এই অবস্থায় বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে ও উপসর্গহীন আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের পৃথক ভাবে রাখার জন্য সব থানাকে নিজ নিজ এলাকায় হোটেল এবং অতিথিশালা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হল। পাশাপাশি, সুরক্ষা-বিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকার জন্য থানার বাইরে পুলিশকর্মীদের ব্যারাক তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী ভিত্তিতে কোথায় কোথায় ব্যারাক তৈরি করা যায়, তা দেখতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিটি থানার ব্যারাকে থাকেন প্রচুর পুলিশকর্মী। তাঁদের প্রতিনিয়ত শহরের নানা প্রান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যেতে হয়। অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়, কথা বলতে হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই পুলিশকর্মীদের জন্য পৃথক আইসোলেশন কেন্দ্র এবং ব্যারাকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রবীন্দ্র সরোবর, কসবা, চারু মার্কেট, লেদার কমপ্লেক্সের মতো কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকটি থানায় ১০ জনের বেশি পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এক জন আক্রান্ত হলে সুস্থ হয়ে ফের কাজে যোগ দিতে কমপক্ষে এক মাসের মতো সময় লাগছে তাঁর। যার রেশ গিয়ে পড়ছে থানার রোজকার কাজে। ব্যাহত হচ্ছে প্রতিদিনের রুটিন কাজও। আক্রান্তের সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি না-পায়, তাই আইসোলেশন কেন্দ্র করা হচ্ছে পুলিশকর্মীদের জন্য। পুলিশের অন্য একটি অংশ জানিয়েছে, শহরের হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা সীমিত। চিকিৎসা পেতে যাতে সঙ্কট দেখা না-দেয়, তাই আইসোলেশন কেন্দ্রগুলি বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে।
বর্তমানে হাওড়ার ডুমুরজলায় কলকাতা পুলিশের ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে পুলিশকর্মীদের রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতা পুলিশের সেন্ট্রাল ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার নিজের এলাকার প্রতিটি থানার ওসিদের ওই নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি থানা এলাকায় একাধিক আইসোলেশন কেন্দ্র করার জন্য হোটেল বা অতিথিশালার সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে। কোথায় কত জন পুলিশকর্মী থাকতে পারবেন, সেখানে কী কী সুযোগসুবিধা রয়েছে, তারও তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। এক পুলিশকর্তা জানান, থানার সুস্থ পুলিশকর্মীদের থাকার জন্য একাধিক ব্যারাক করার নির্দেশও দিয়েছেন ডিসি।
এর জন্য এলাকায় উপযুক্ত বাড়ি চিহ্নিত করে সব রকম পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আইসোলেশন কেন্দ্র এবং ব্যারাকের বিস্তারিত তালিকা মঙ্গলবারের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিভিন্ন থানা নিজেদের উদ্যোগে থানার ব্যারাকে পুলিশকর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। থানা এলাকাতেই হলঘর বা কমিউনিটি সেন্টারকে ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্রের দাবি, এর আগে লালবাজার থেকে মৌখিক ভাবে সব থানাকেই উপসর্গহীন পুলিশকর্মীদের রাখার জন্য তাদের এলাকায় আইসোলেশন কেন্দ্র ঠিক করতে বলা হয়েছিল। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভাবে লালবাজার থেকে তদারকও করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে, প্রায় প্রতিটি থানাই নিজেদের উদ্যোগে কিছু কিছু ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এ বার সরকারি ভাবে পুলিশবাহিনীর জন্য ওই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, সংক্রমণ এড়াতে থানাগুলি বহিরাগতদের প্রবেশে রাশ টেনেছে। অপ্রয়োজনে কেউ যাতে থানায় প্রবেশ না করেন, তা দেখতে বলা হয়েছে। তবে সূত্রের খবর, যে ভাবে কিছু থানা গেট বন্ধ করে দিয়েছে, তাতে সমর্থন নেই পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের। তাই থানাগুলিকে ডিউটি অফিসারের সামনে কাচের দেওয়াল বানাতে বলা হয়েছে। এতে অভিযোগ জানাতে আসা কারও সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে পুলিশকর্মীদের পক্ষে।