রোগী নেই বারাসতের একটি সেফ হোমে। নিজস্ব চিত্র
সংক্রমণ পর্বের শুরু থেকেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বড় চিন্তার কারণ ছিল কলকাতা এবং তার পড়শি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। সেই মতো গত কয়েক মাসে একে অপরকে টেক্কাও দিয়েছে দুই জেলা। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে সেখানে দৈনিক সংক্রমিতের হার কিছুটা হলেও নিম্নমুখী। ফলে সাড়ে আট মাস পরে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আশা জাগাচ্ছে সুস্থতার হারও। এক সময়ে দৈনিক সংক্রমণে পুরো রাজ্যের প্রায় অর্ধেক সংক্রমিতের ঠিকানা ছিল কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা। কোভিড হাসপাতালের শয্যা নিয়ে তখন হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। ঠাঁই নেই রব উঠেছিল সেফ হোমগুলিতেও। এখন অবশ্য শহরতলির সেফ হোমগুলিতে রোগী প্রায় নেই। শয্যা খালি রয়েছে কোভিড হাসপাতালগুলিতেও।
এর মূল কারণ, বাড়িতে থেকেই সুস্থ হচ্ছেন বেশির ভাগ রোগী। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে রোজই আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার বেশি। ফলে দ্রুত গতিতে কমছে অ্যাক্টিভ রোগী। করোনার দাপট যদি এ ভাবে কমতে থাকে, তা হলে দ্রুত কোভিডকে বাগে আনা যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, পয়লা ডিসেম্বর কলকাতায় অ্যাক্টিভ রোগী ছিল ৬২৯০। উত্তর ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যা ছিল ৫৯৪৯। মাত্র ২০ দিনে ওই দুই জেলায় অ্যাক্টিভ রোগী প্রায় দু’হাজার জন করে কমেছে। রবিবার পর্যন্ত কলকাতায় অ্যাক্টিভ রোগী ৪২৮১ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৩৭৮ জন। অথচ নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দৈনিক সংক্রমিতের থেকে সুস্থতার হার কিছুটা কম ছিল। ফলে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
আরও পড়ুন: কাল সন্ধ্যায় আকাশে চোখ, শনি-বৃহস্পতি এত কাছে আসছে ৪০০ বছর পর
আরও পড়ুন: দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, স্বীকার করল ব্রিটেন
সংক্রমণের নিরিখে এক সময়ে দেশে নজির গড়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা। প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছিল। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এখন তা ১০-এর নীচে এসেছে। ডিসেম্বরের প্রথম দিন ওই জেলায় আক্রান্ত ছিলেন ৭৯৬ জন। সে দিন সুস্থ হন ৯৫২ জন। ওই দিন কলকাতায় আক্রান্ত হন ৮০৭ জন, সুস্থ হন ৯৪৬ জন।
বর্তমানে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা পাঁচশোর ঘরে নেমে এসেছে। ফলে সেফ হোমগুলিতে আর স্থানাভাব নেই। পুরোপুরি খালি না হলেও রোগী অনেক কমেছে। কারণ, বেশির ভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন বলে সেফ হোমে আসার প্রবণতা অনেক কমেছে।
বাড়িতে যাঁদের একান্তই আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই, তাঁরাই সেফ হোমে আসছেন। জেলার কোভিড হাসপাতালগুলিতেও শয্যা খালি রয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, সক্রিয় রোগী যে হারে কমছে, তাতে দ্রুত সেফ হোমের প্রয়োজন ফুরোতে পারে। তবে এখনই সেগুলি বন্ধ করা হচ্ছে না।
মূলত উপসর্গহীন রোগীদেরই সেফ হোমে রাখার নিদান দেওয়া হয়েছিল। জুলাই থেকে সেফ হোমে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে সেফ হোমগুলিতে স্থানাভাব শুরু হয়। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করে জানায়, বাড়িতে আলাদা থাকার সুযোগ থাকলে সেখানে থেকেই আক্রান্তেরা টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে পারেন। ফলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কলকাতা ও জেলার বেশির ভাগ সেফ হোমই রোগী-শূন্য।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, ব্যারাকপুর মহকুমার অধিকাংশ সেফ হোমে রোগী নেই। দু’-একটিতে গুটিকয়েক রোগী আছেন।
বারাসত এবং মধ্যমগ্রামের সেফ হোমেও রোগী অনেক কম আসছেন। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “বেশির ভাগ আক্রান্ত বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করায় সেফ হোমে রোগীর সংখ্যা কম। কোভিড হাসপাতালেও শয্যা খালি রয়েছে। যাঁদের অবস্থা জটিল হচ্ছে, তাঁদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”