Coronavirus in West Bengal

বর্ষবরণের মিষ্টি-মুখেও থাবা করোনার

শহরের ইতিহাস বলছে, এক সময়ে নববর্ষের রাতে নতুন পোশাক পরে অতিথিরা বিভিন্ন জায়গায় নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতেন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১২
Share:

ডাঁই হয়ে পড়ে মিষ্টির বাক্স। নিজস্ব চিত্র

বাঙালির যে কোনও শুভ কাজ মানেই মিষ্টিমুখ। ব্যতিক্রম নয় বাংলা নববর্ষও। কিন্তু ১৪২৬ বঙ্গাব্দের চৈত্র শেষে করোনা-হানায় এ বার ছেদ পড়েছে সেই পরম্পরায়!

Advertisement

তাই এ বছর মিষ্টির প্যাকেটের অর্ডার আসা যেমন বন্ধ, তেমনই বায়না করা টাকাও ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। সাধারণত ভাইফোঁটা ও নববর্ষ উপলক্ষে মিষ্টির দোকানে ব্যবসা বেশি হয়। কিন্তু লকডাউনের জেরে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের সূচনা লগ্নে ব্যবসা বড় ধাক্কা খাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শহর থেকে শহরতলির ছোট-বড় মিষ্টির দোকানের মালিকেরা। কলকাতার এক মিষ্টির দোকানের তরফে পার্থ নন্দী বলেন, ‘‘নববর্ষের আগে ছোট-বড় সব মিষ্টির দোকানেই চরম ব্যস্ততা থাকে। সেখানে এ বছর চোখে জল আসার অবস্থা।’’

শহরের ইতিহাস বলছে, এক সময়ে নববর্ষের রাতে নতুন পোশাক পরে অতিথিরা বিভিন্ন জায়গায় নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতেন। সেখানে কলাপাতায় বিবিধ পদ খাওয়ার পরে শেষ পাতে পড়ত মিষ্টি। তবে এখন ভূরিভোজের বদলে ধার-দেনা মিটিয়ে হালখাতায় নাম তোলা খদ্দেরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মিষ্টির প্যাকেট দেন ব্যবসায়ীরা। নববর্ষ উপলক্ষে এই মিষ্টির প্যাকেটের হাতবদলের ওই রেওয়াজও কিন্তু বেশ পুরনো।

Advertisement

আরও পড়ুন: এ দেশে করোনা সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি, জীবন চলছে একই ছন্দে

মোতিচুরের লাড্ডু, লবঙ্গলতিকা, গজা, কড়া পাকের সন্দেশ, নিমকি থেকে হালফিলের আম সন্দেশ, বেক্‌ড রসগোল্লা, চকলেট সন্দেশের পাশাপাশি হরেক রকমের মিষ্টি ভর্তি প্যাকেট বানাতে গিয়ে প্রতি বছর নববর্ষের অন্তত ৭-৮ দিন আগে থেকে হিমশিম খেতে হয় মিষ্টি ব্যবসায়ীদের। শহরের এক মিষ্টির দোকানের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বলেন, ‘‘কম করে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ডার আসে। কেউ একশো প্যাকেট তো কেউ দু’হাজার প্যাকেটেরও অর্ডার দেন। এ বার সেখানে একটিও অর্ডার আসেনি।’’

অবাঙালি এক মিষ্টির দোকানের মালিক দীনেশ আগরওয়াল জানান, গত বছরও তাঁরা পাঁচ হাজার মিষ্টির প্যাকেট বানিয়েছিলেন। এ বার সেখানে অর্ডারের সংখ্যা শূন্য। অন্যান্য বছরে নববর্ষ উপলক্ষে মিষ্টির প্যাকেট করার জন্য বাক্স তৈরি করতেই আস্ত একটা ঘর লাগত বলেই জানাচ্ছেন শহরের আর এক দোকানের মালিক ধীমান দাস। একই অবস্থা শহরতলির মিষ্টির দোকানগুলিতেও। বরাহনগর-সহ শহরের আরও তিনটি মিষ্টির দোকানের মালিক রামচন্দ্র ঘোষমণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতি বছরই প্রায় দু’-তিন হাজার প্যাকেটের অর্ডার আসে। পুরনো ক্রেতারা অনেক আগেই অর্ডার দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এ বার সব বাতিল হয়ে গিয়েছে।’’

করোনার জেরে নববর্ষের ব্যবসায় ধাক্কা লাগলেও মানবিক দিক থেকে সেই ক্ষতি সংগঠনের সকল সদস্যই মেনে নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ সম্রাট দাস। আবার মিষ্টির প্যাকেটের বায়নার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একটু অন্য রকমের চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন সারা ভারত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কলকাতার দায়িত্বে থাকা অমিতাভ দে। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণত মিষ্টির দোকানদারদের নববর্ষ পালনের সুযোগ থাকে না। তাই যাঁরা বহু বছর ধরে আমাদের থেকে মিষ্টি নেন, প্রশাসনের অনুমতি পেলে এ বার তাঁদের মিষ্টিমুখ করাতে যেতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement