প্রতীকী ছবি।
ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের ধাক্কায় বিপর্যস্ত চিকিৎসা পরিষেবা। শয্যা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধের আকালের পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারও প্রায় ফাঁকা। মিলছে না প্লাজ়মাও।
করোনার কারণে গত বছর থেকেই শুরু হয়েছে রক্তের সঙ্কট। এ বছরও কার্যত একই অবস্থা। চিকিৎসক থেকে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা জানাচ্ছেন, এক দিকে কোভিড পরিস্থিতি, অন্য দিকে নির্বাচন― এই দুইয়ের কারণে এখনও পর্যন্ত রক্তদান শিবির হয়েছে হাতে গোনা। কোথাও আবার শিবির হলেও অনেকেই করোনার আতঙ্কে রক্তদান করতে পিছপা হচ্ছেন। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, “মনে রাখতে হবে, কোভিড আক্রান্ত ছাড়াও অন্য রোগীদের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার চলছে বিভিন্ন হাসপাতালে। সেখানে রক্তের প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি হচ্ছে রোগীর পরিজনদের।” তাই সেই সঙ্কট কাটাতে এগিয়ে আসার আবেদন করছেন চিকিৎসকেরা।
আবেদনে সাড়া দিয়েই শুক্রবার এগিয়ে আসেন গোয়েন্কা কলেজ অব কমার্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া অগ্নিভ মিত্র। গত বছর দেখা গিয়েছিল, করোনাজয়ীদের অনেকেই প্লাজ়মা দান করছিলেন। সেই পথে হাঁটতে চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছিলেন নভেম্বরে সংক্রমিত অগ্নিভ। তিনি বলেন, “প্লাজ়মা দেওয়ার পদ্ধতি জানা ছিল না। খোঁজ করেছিলাম পরিচিতদের কাছে। শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যোগাযোগ পাই।” এ দিন সকালে বাইপাসের ধারের বাড়ি থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে প্লাজ়মা দেন তিনি।
যদিও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রসূণ ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, এই প্লাজ়মার ব্যবহার বিবেচনা করে এবং গবেষণামূলক ভাবে ব্যবহার করলে তা কয়েক জন রোগীর ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হতে পারে, সকলের ক্ষেত্রে নয়। তিনি বলেন, “এমনিতেই শয্যা নেই, অক্সিজেন সঙ্কট। পাশাপাশি প্লাজ়মা না থাকলে চিকিৎসাই হবে না, এমন প্রচার চলতে থাকলে আরও একটি দুঃশ্চিন্তা রোগী ও তাঁর পরিবারের মাথায় চেপে বসবে। ফলে সকলকেই প্লাজ়মা দানের জন্য আবেদন করা হলে তা ভুল হবে। কারণ যেমন খুশি প্লাজ়মার ব্যবহার বিপজ্জনক। মরণাপন্ন রোগীকে প্লাজ়মা দিয়েও লাভ হয় না।” এ ছাড়া প্রতিষেধক নিলে প্লাজ়মা দান করা যায় না বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে গেলে বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক নিতেই হবে।
তেমনই শূন্য রক্তের ভাঁড়ারের দিকেও মানুষের নজর দেওয়া উচিত বলেই মত তাঁদের। চিকিৎসকদের মতে, “রক্তের সঙ্কট মেটানোর দায়বদ্ধতা সকলকেই নিতে হবে।” তেমনই দায়বদ্ধতা উপলদ্ধি করে এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্তদান করেন মনীষামুরলী নায়ার। ডিসেম্বরে করোনা থেকে সেরে ওঠা মনীষার কথায়, “অতিমারি পরিস্থিতিতে সকলের কথা ভেবেই এগিয়ে এলে রক্তের সঙ্কট মিটবে।” বাড়িতে সাত বছরের মেয়েকে রেখে গাড়িতে চেপে একাই হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে এসে রক্ত দিয়ে ফেরার পথে সঙ্গীতশিল্পী গেয়ে উঠলেন, “আমি ভয় করব না ভয় করব না...।”